২৯ মে ২০২৪, ০০:০২

ইমামের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা, তিনি নির্দোষ: জবি ছাত্রী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে এক ছাত্রীর ঘুমানোর ঘটনাকে জড়িয়ে মসজিদের ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিনকে মৌখিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৭ মে) এই অব্যাহতির আদেশ দেওয়ার পর ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ওই ছাত্রীর দাবি, মসজিদের ইমামের কোনো দোষ নেই। তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা।

ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্রী বলে জানা গেছে। তিনি জবির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক ছাত্রী। 

জানা যায়, গত ১৮ মে রাতে শারীরিক অসুস্থতা থাকায় ভুলবশত এশার নামাজ আদায় শেষে ওই ছাত্রী জবির কেন্দ্রীয় মসজিদের মেয়েদের রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে মসজিদের পাহারাদার তালা লাগাতে গেলে ওই মেয়েকে দেখতে পান। এসময় মসজিদের ওই পাহারাদারের স্ত্রী তাকে বের করে নিয়ে আসেন। তবে ইমাম বা পাহারাদার কেউই ভেতরে প্রবেশ করেননি।

সেই রাতের ঘটনা বর্ণনা করে জবি ছাত্রী বলেন, সেদিন রাতে আমি এশার নামাজের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘুম ভাঙে। লাইট অফ থাকায় ডাকাডাকি করি। এর মধ্যেই দুজন পাহারাদার আসেন। তাদের কাছে বলি, নামাজের মধ্যে কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম বুঝতে পারিনি।

তিনি বলেন, পাহারাদাররা আমাকে বের করেন। একটু পর ইমাম আসেন। তিনি প্রক্টরকে ফোন দেন। আমিও তার সঙ্গে কথা বলি। এরপর হাউস টিউটরের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। উনি আমাকে হলে চলে আসতে বলেন। এতে ইমামের তো কোনো দোষ নেই। উনি খুব ভালো মানুষ। তিনি মসজিদের ভেতর প্রবেশই করেননি।

মসজিদের ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিন বলেন, আমার কাজ মসজিদে নামাজ পড়ানো। কোথায় কে ঘুমিয়ে রয়েছে, সেটা দেখা আমার দায়িত্ব না। তাই নামাজ পড়িয়ে বাসায় চলে এসেছি। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুয়াজ্জিন ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান আমাকে। এরপর মসজিদের ভেতরে একজন মেয়ে শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন জেনেই আমি প্রক্টরকে ঘটনাটি জানাই।

ইমাম ছালাহ উদ্দিন বলেন, আমি এসে প্রক্টরের সঙ্গে ওই ছাত্রীকে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিই। ওই ছাত্রী তখন বলেন, তিনি একা ছাত্রী হলে চলে যেতে পারবেন। এরপর তিনি হলে চলে যান। এর ১০ দিন পর গতকাল (সোমবার) শুনি আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছে।

দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ছাত্রী হলের হাউস টিউটর সাজিয়া আফরিন সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘হ্যাঁ, সে (ছাত্রী) আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমাকে ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি বলে। তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, সে হলে নতুন হওয়ায় ভয় পাচ্ছিল। পরে আমি তাকে হলে ফেরার ব্যবস্থা করে দিই। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে হলে দিয়ে আসেন।’ 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ওই ছাত্রীর ঘুমানোর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমানকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর খালিদ সাইফুল্লাহকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পারভীন আক্তার জেমী, আইসিটি সেলের পরিচালক ড. আমিনুল ইসলাম ও একাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এএনএম  আসাদুজ্জামান ফকিরকে রাখা হয়েছে। 

এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. একেএম লুৎফর রহমান বলেন, আমি গতকাল (সোমবার) জানতে পারলাম আমাকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে দেখা হবে। তাই তদন্ত শেষ না হলে বিষয়টি নিয়ে বলা যাচ্ছে না। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি তো ইমাম বা ওই ছাত্রীর দোষ দিচ্ছি না। বিষয়টা হলো- মসজিদে একটা মেয়ে ঘুমাবে কিন্তু ইমাম জানবেন না, এটা তো হতে পারে না। এটা কি তার দায়িত্বে অবহেলা নয়! এজন্য তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নামাজ পড়ানো থেকে নিষেধ করা হয়েছে।