জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি সেশনে ভর্তি আবেদনকারীদের কী হবে?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে (অন-ক্যাম্পাস) অনার্স প্রোগ্রাম চালু সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন করে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করায় ২০২৩-২৪ সেশনে ভর্তি আবেদনের ফলাফল প্রকাশ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অন-ক্যাম্পাস ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ২০২৩-২৪ সেশনের ভর্তি আবেদন ৬ ফেব্রয়ারি ২০২৪ থেকে শুরু হয়ে ৪ মার্চ পর্যন্ত চলে। এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের জন্য ভর্তি আবেদন আহ্বান করা হয়। আবেদন ফি ৫০০ টাকা ধরা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আবেদন শেষ হওয়ার আড়াই মাস পার হলেও ফলাফল প্রকাশ ইচ্ছে করে দেরি করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমন একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশংকায় ছিল।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. পারভেজ হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে (অন ক্যাম্পাস) অনার্স প্রোগ্রাম চালু সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেহুতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছে আমরা সেটার বাহিরে যাবো না। চলতি সেশনের ভর্তি আবেদনের ফলাফল প্রকাশ হবে না। আমরা এখনো সিন্ডিকেট বৈঠকে বসিনি। সিদ্ধান্ত তো আজকে মন্ত্রণালয় জানালো। আমরা সিন্ডিকেট বৈঠকে বসে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।
তিনি আরো বলেন, অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের কোর্স চালুর অনুমতি দেয়। এখন এই বছর এসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে (গাজীপুর) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর তা বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয় ইউজিসি।
নির্দেশনায় অন ক্যাম্পাস স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এরপর অন ক্যাম্পাস স্নাতক কোর্স বন্ধ রাখতেও বলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আগ পর্যন্ত ভর্তিসহ এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের জন্য এরপর কয়েক দফায় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় ইউজিসি।
তখন ইউজিসি বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বিধায় ইউজিসি এ নির্দেশ দিয়েছে। তবে এর পরদিনই ইউজিসির নির্দেশের জবাব দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছিল ইউজিসির পত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের যেসব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, তা আংশিক ও খণ্ডিত।
তাদের ভাষ্য, মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও যথার্থ। এ নিয়ে ইউজিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একের পর এক পাল্টাপাল্টি চিঠি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানায়। তখন তৃতীয় দফায় চিঠি দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অনার্স কোর্সে ভর্তিসহ এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছিল ইউজিসি। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান থেকে নড়েনি।