জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬০ শিক্ষার্থীর ভাগ্যে কী আছে?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে (অন-ক্যাম্পাস) অনার্স প্রোগ্রাম চালু সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত বছর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে অন-ক্যাম্পাসে ভর্তি ১৬০ শিক্ষার্থীর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে কোনো নির্দেশনা উল্লেখ না থাকায় শিক্ষা জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করণীয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. পারভেজ হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে (অন-ক্যাম্পাস) অনার্স প্রোগ্রাম চালু সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানা যায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সে মেধার ভিত্তিতে ১৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। নতুন করে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে অনলাইনে আবেদন শেষ হলেও মেধা তালিকা প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে (অন-ক্যাম্পাসের) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের (বিবিএ) শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বছর থেকে ভর্তি বন্ধের বিষয়টি শুনেছি। এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু জানায়নি। যদি আমাদের পড়া বন্ধ হয়ে যায় এ ক্ষতিপূরণ কে দিবে।
এ শিক্ষার্থী আরো বলেন, গত বছর আমরা বিভিন্ন কলেজে ভর্তি ছিলাম। সেখান থেকে ভর্তি বাতিল করে এখানে ভর্তি হয়েছি। এখন এক বছর পর যদি বলে শিক্ষা জীবন চলমান থাকবে না অথবা চলমান থাকলেও সার্টিফিকেট দিবে না তাহলে আমরা ১৬০ জন শিক্ষার্থী কোথায় যাবো। আমাদের সেই বয়স ও নেই এখন অন্য কোথাও ভর্তি হবো। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি সিদ্ধান্ত নেয় সে দিকে চেয়ে আছি।
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের কোর্স চালুর অনুমতি দেয়। এখন এই বছর এসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়। আমাদের এ সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
ভর্তিকৃত ১৬০ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি ভাবছে জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১৬০ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। যেহেতু সেই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছিল সেহেতু ওদের কার্যক্রম চলতে বাধা নেই। তবুও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়াও আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করবো পরবর্তী করণীয় নিয়ে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে (গাজীপুর) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর তা বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয় ইউজিসি।
নির্দেশনায় অন-ক্যাম্পাস স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এরপর অন ক্যাম্পাস স্নাতক কোর্স বন্ধ রাখতেও বলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আগ পর্যন্ত ভর্তিসহ এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের জন্য এরপর কয়েক দফায় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় ইউজিসি।
তখন ইউজিসি বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বিধায় ইউজিসি এ নির্দেশ দিয়েছে। তবে এর পরদিনই ইউজিসির নির্দেশের জবাব দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছিল ইউজিসির পত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের যেসব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, তা আংশিক ও খণ্ডিত।
তাদের ভাষ্য, মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও যথার্থ। এ নিয়ে ইউজিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একের পর এক পাল্টাপাল্টি চিঠি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানায়। তখন তৃতীয় দফায় চিঠি দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অনার্স কোর্সে ভর্তিসহ এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছিল ইউজিসি। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান থেকে নড়েনি।