আন্দোলনরত কুবি শিক্ষকদের উপর হামলা, অংশ নিলেন ভিসি নিজেই!
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একাংশ, সাবেক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের নিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় উপাচার্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ রায়হান কে কনুই দিয়ে আঘাত করেন এবং প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম কে গালে ঘুসি দেন। এছাড়াও সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের আঘাতে আহত হয়েছেন ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, মাহফুজুর রহমান, দুলাল চন্দ্র নন্দী, শামিমুল ইসলাম সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) এই হামলার জেরে উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে কুবি শিক্ষক সমিতি।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির দাবি না মানায় উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের দপ্তরে তালা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর গতকাল শনিবার ট্রেজারারকে অবরুদ্ধ করে তাঁর গাড়ি আটকে দেয় শিক্ষক সমিতি।
আজ (২৮ এপ্রিল) দুপুর ১ টায় প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী, সহকারী প্রক্টর আবু ওবাইদা রাহিদ, জাহিদ হাসান, অমিত দত্ত, মোশাররফ হোসেন ও আইকিউএসিরি পরিচালক ড. রশিদুল ইসলাম শেখের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে ফেলেন। এসময় তাঁরা উপাচার্য ও ট্রেজারারকে নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষকরা বাঁধা দেওয়ায় তাঁদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদকের হাতে থাকা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাবেক শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কিল-ঘুষি, লাথি ও ধাক্কা দিয়ে উপাচার্যসহ প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করে। এসময় তাঁরা 'জয় বাংলা' এবং 'শিবিরের গালে গালে, জুতা মার তালে তালে', 'শিবিরের চামড়া তুলে নিব আমলাসহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ রায়হানকে কনুই দিয়ে ঘুসি এবং মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানকে ধাক্কা দিতে দেখা যায়। এছাড়া প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকাদ্দেস-উল- ইসলামকে ঘুসি দিতে দেখা যায়। এরপর হামলায় আহত শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য প্রবেশ করলে সাবেক শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফায় আবারও শিক্ষকদের ওপর হামলা করেন।
এরমধ্যে আমিনুর বিশ্বাস ও পার্থ সরকার প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌসকে ধাক্কা দেন। পরবর্তীতে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমিনুর বিশ্বাসকে নিবৃত্ত করে নিয়ে যান।
তার আগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মো শামিমুল ইসলাম সাবেক শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে বিপ্লব দাস ও আমিনুর রহমান বিশ্বাস ধাক্কা দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর আমিনুর ও রকিবুল হাসান রকি গিয়ে শিক্ষক লাউঞ্জ বন্ধ করে দেয়।
এছাড়াও সাবেক শিক্ষার্থী পার্থ সরকার, বিপ্লব দাসসহ অনেকে শিক্ষকদেরকে কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে দেখা যায়। হামলাকালে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো আবু তাহের, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো শামিমুল ইসলাম, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আহত হন।
উপাচার্যের কনুইয়ের আঘাতের বিষয়ে তিনি জানান, উপাচার্য যেভাবে বহিরাগতদের নিয়ে আসলেন তা শিক্ষক ও অভিভাবকসুলভ আচরণ নয়। তিনি আসলে প্রক্টরিয়াল বডি নিয়ে আসবেন। বহিরাগতদের নিয়ে কেন আসবেন? বহিরাগতদের দিয়ে উনি শিক্ষকের আঘাত করলেন এবং বাজে মন্তব্য করালেন। এত মানুষের ভিড়ে ঐ সময়ে পিঠে যে কনুইয়ের আঘাত করেছেন তা এখন প্রচণ্ড ব্যথা করছে। উপাচার্যের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়।
এ বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী রানাকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও বারবার তিনি প্রতিবেদকের কল কেটে দেন।
আঘাতপ্রাপ্ত প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: মুরশেদ রায়হান জানান, আমি কিন্তু দুই হাত উঁচু করে গ্রিল ধরে ছিলাম পুরো সময়। উপাচার্য বলেছেন আমি আক্রমণ করেছি, ধাক্কা দিয়েছি। অথচ ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে প্রথমে উপাচার্য পরে অগনিত আক্রমণকারী আমার পেটে প্রচন্ডভাবে আঘাত করেন। আর উপাচার্য মেরেছেন পেছন দিক থেকে। অথচ এখন উল্টো মিথ্যাচার করছেন।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, এখানে আমাদের কোন দোষ নেই। তাঁদের দাবিগুলো অযৌক্তিক। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা করছে। আমি তাঁদের সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি।