প্রো-ভিসি নিয়োগ দুপুরে, রাতে স্থগিতের নেপথ্যে দুই কারণ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রো-ভিসি (উপ-উপাচার্য) হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। ওই দিন রাতে একই দপ্তরের আরেক প্রজ্ঞাপনে এই নিয়োগ স্থগিত করা হয়। তবে প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নিয়োগ দুপুরে, রাতে স্থগিতের এমন ঘটনা শিক্ষা প্রশাসনের নজিরবিহীন। ফলে এ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। তবে এই প্রজ্ঞাপন স্থগিতের নেপথ্যে দুই কারণ রয়েছে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নিয়োগ-স্থগিত বিষয়টি প্রথমত পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বর্তমানে দায়িত্ব পালন করা শীর্ষ এক ব্যক্তি, ড. মিজান যোগদান করলে সেই শীর্ষ ব্যক্তি পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিশেষ একটি অঞ্চলের আধিপত্য-প্রাধান্য। নতুন প্রো-ভিসি ড. মিজান সেখানে যোগদান করলে তাদের সেই আধিপত্য-প্রাধান্য কমে যাওয়ার শঙ্কা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রো-ভিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন
এ বিষয়ে ড. মিজানুর রহমান বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অনেক দিন ধরে একটি বিশেষ অঞ্চলের আধিপত্য রয়েছে। সেখানে তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমি সেখানে প্রো-ভিসি হিসেবে যোগদান করলে হয়তো তাদের আধিপত্য কমে যাবে, তারা এমনটাই মনে করছেন। তাই সেখানকার বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ হর্তাকর্তারা সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই নিয়োগ স্থগিত করার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রো-ভিসি ঢাবি অধ্যাপক মিজানুর
ড. মিজানুর রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি সাভারে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) অধ্যক্ষ ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীদের হেনস্তা ও যৌন হয়রানি এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।
মূলত এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে ড. মিজানুর রহমানের প্রো-ভিসি হিসেবে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে পেছন থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে কলকাঠি নাড়েন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই শীর্ষ ব্যক্তি। তবে ড. মিজানুর রহমানের এসব অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পায়নি সেই সময়ে গঠন করা তদন্ত কমিটি।
নিটারের ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ
ড. মিজানুর রহমানের ভাষ্য, এ ঘটনার শুধু অভিযোগগুলো (পত্রিকার কাটিং) প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এটাতো পুরাই মিথ্যা। কেননা পরবর্তীতে অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পায়নি কমিটি। যেখানে তদন্ত কমিটিতে হাই-প্রোফাইল লোকজন যেমন- আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, এমনকি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাও ছিলেন। তাহলে কি তাদের প্রতিবেদন মিথ্যা?
তিনি বলেন, এখন আমার যোগদান প্রক্রিয়াটি স্থগিত রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি সেখানে আমাকে রাখার ইচ্ছে পোষণ করেন তাহলে এই নিয়োগাদেশ বহাল থাকবে। বিষয়টি এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
নিয়োগ স্থগিত করার আদেশ
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বা শিক্ষকদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবনা আলোকে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, নির্দেশনা বা অনুশাসনের আলোকে তাদের নিয়োগের প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার পর আচার্যে সাচিবিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগের আদেশ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে চার বছরের জন্য দায়িত্ব নিতে বলা হয়। আবার অনেক সময় অস্থায়ীভাবেও নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: প্রো-ভিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দুপুরে, রাতে স্থগিত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির নিয়োগ প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে চার বছরের জন্য নিয়োগ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এরকম পদে নিয়োগের আগে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রার্থীর আমলনামা সংগ্রহ করে তা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়। এতে তার পারিবারিক, রাজনৈতিক এবং একাডেমিক কোনটির কি অবস্থা তা প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হয়।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
জানা গেছে, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নিয়োগের আগেও সম্পন্ন করা হয় এসব প্রক্রিয়া। তার দাবি, কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার এসব তথ্য নিয়েছে। তিনি জানান, তিনি ২০০৬ সালে ঢাবিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে ২০০৮ সালে এসে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হন। যদিও যোগদান করে তিনি পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি গ্রহণের উদ্দেশ্যে জাপানে যান।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-ডুয়েটে লেকচারের হিসেবে যোগদান করেন ড. মিজানুর। এরপর ২০০২ সালে জাপানে যান পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে। সেখান থেকে ফিরে ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগের পরই তিনি জেএসপি স্কলারশিপ নিয়ে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি গ্রহণের উদ্দেশ্যে জাপানে যান। ডিগ্রি গ্রহণ শেষে ২০০৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীল দলের কন্টাক্ট পারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রফেসর মিজান ২০০৯ সালে দুই বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। পরের দুই বছর তিনি অনুষদটিতে নীল দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কর্তৃক মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন তিনি। ২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ড. মিজান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার ছিলেন। যেখানে তিনি সিনিয়র ফ্যাকাল্টি রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মনোনীত হন। পরপর তিন বার তিনি এ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ ও ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের আইটি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নিটারের ঘটনায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা
এছাড়াও নিয়োগ কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসিতে যুক্ত ছিলেন ড. মিজান।
ড. মিজান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আস্থাভাজন না হওয়া এবং সেখানে বিশেষ অঞ্চলের প্রাধান্য— মূলত এই দুই কারণে প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত হয়েছে। আর নিটারের একটি ঘটনার মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই নিয়োগ স্থগিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও আমার একাডেমিক এক্সিলেন্সি দেখেও তারা ঈর্ষান্বিত। কেননা জার্নাল প্রকাশ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন— কোনো কিছুতে ঘাটতি নেই আমার।
তিনি আরও বলেন, আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলে সেখানে কারও কারও অনিয়ম-দুর্নীতি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই হয়তো স্থগিত করতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, সরকার প্রো-ভিসি হিসেবে যোগ্য যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু নতুন প্রো-ভিসি নিয়োগের যে কোয়েরিগুলো দরকার ছিল পরবর্তীতে সেখানে ভিন্ন রকমের তথ্য পেয়েছে। তারপর তারা এটা যোগদানের পূর্বে বাতিল বা স্থগিত রেখেছে। এখানে আমার বক্তব্য দেয়ার বেশি সুযোগ নেই। আমি দুপুরের দিকে জেনেছি, পরবর্তীতে রাতে স্থগিত করেছে জানলাম। এর মাঝখানে আমার দিক থেকে বক্তব্য দেয়া কিছু নেই আসলে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা হিসেবে এই স্থগিতের বিষয়ে তার ভূমিকা রয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, যেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, সেই নিয়োগ স্থগিত বা বাতিলে আমার সম্পৃক্ত কিভাবে থাকবে? এই প্রশ্ন করেন তিনি। তারা নিয়োগ দিয়েছে (সরকার), আবার তারাই তো বাতিল করেছে বলে তিনি দাবি করেন।
“কিন্তু আমার টিমটা কেমন হবে সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য থাকতে পারে। কারণ আমি কিরকম টিমে কম্ফোর্টেবল, সেটাও একটি বিষয়। এটাতো একটা টিম ওয়ার্ক। যে টিম লিড করে তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে (প্রো-ভিসি নিয়োগ) করাটা সমীচীন বলে তিনি মনে করেন।
শিক্ষা প্রশাসনের নজিরবিহীন ঘটনা
দেশের উচ্চশিক্ষা প্রশাসন ও পরিচালনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। মন্ত্রণায়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে প্রো-ভিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর তা স্থগিত হওয়াটা নজিরবিহীন ঘটনা ঘটনা বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর অনেকেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে যোগদান করা থেকে বিরত থাকেন। তবে সেক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটাই খুবই কম। প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর সর্বশেষ ২০২২ সালে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) ভিসি হিসেবে যোগদান করেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
প্রো-ভিসি নিয়োগে পরামর্শ নেয়া হয়নি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান ২০১৭ সালের ৯ মে থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর ২০২১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি হিসেবে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। তারপরে প্রো-ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ একাধিক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সে সময় এসব নিয়োগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তা হিসেবে ড. মো. মশিউর রহমান প্রস্তাব বা পরামর্শ গ্রহণ করেছে সরকার। তবে নতুন প্রো-ভিসি নিয়োগে এমন প্রস্তাব বা পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।
জানতে চাইলে ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, এটা ডিপেন্ড করে। কখনও পরামর্শ নেওয়া হয়, কখনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রস্তাব যায়। আবার সরকারও চাইলে দিতে পারে।
তবে আমরা আগের অভিজ্ঞতা হলো, আমি ভিসি হিসেবে যোগদান করার পর প্রো-ভিসি (অধ্যাপক ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ) ও ট্রেজারার নিয়োগের প্রস্তাব নিজেই পাঠিয়েছি। কিন্তু এবার কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি।
তাছাড়া প্রজ্ঞাপনের আগের আমার সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। রেওয়াজ অনুযায়ী, ভিসির প্রস্তাবনা থাকে। কিন্তু এবার সেই রেওয়াজটি অনুসরণ করা হয়নি। ভিসি হিসেবে সেই প্রস্তাব আমি দেইনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আঞ্চলিকতায় কী প্রাধান্য রয়েছে?
অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমানের আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ এর দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, অধ্যাপক, ড. মো. মশিউর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার, একজন ডিনসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা একই অঞ্চলের হওয়াতে সেই অঞ্চলের প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অঞ্চলের এক কর্মকর্তা জানান, ভিসি স্যারসহ অনেকের ইচ্ছে নতুন প্রো-ভিসি যোগদান না করুক। কারণ উনিসহ প্রশাসনের শীর্ষ অনেকের একই অঞ্চলের হওয়াতে তাদের একটি জোরালো ভূমিকা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা এটাই একমাত্র কারণ। তাছাড়া তার (ড. মিজান) বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ তো রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেক কর্মকর্তা বলেন, ১০-১২ বছর ধরে একটা অঞ্চলের শীর্ষ ব্যক্তিরা থাকলে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও তা হচ্ছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই অঞ্চলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় যোগ্যরাও নিয়োগ পেয়ে থাকেন বলে তিনি দাবি করেন।