১৭ দিনেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি
শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তাৎক্ষণিক গঠিত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। তবে সেই নির্দেশনার ১৭ দিন অতিবাহিত হলেও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত কমিটি বলছে প্রতিবেদন কবে জমা দিতে হবে তার স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা তাদের দেয়া হয়নি।
অবন্তিকার আত্মহননের পরপরই ১৬ মার্চ মধ্যরাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
সেই রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমি কথা দিচ্ছি তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তাছাড়া এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ঘটা ঘটনারও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। আর আমার হাতে যত আইন আছে, সব আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবো।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, এর আগেও বিভিন্ন ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ পর্যন্ত সেসব তদন্তের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তদন্ত সাপেক্ষে অতি দ্রুত দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফাঁস নিলেন জবিছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা
নাট্যকলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের সব আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে প্রশাসন যদি আমাদের আন্দোলন হালকাভাবে নেয় তাহলে হয়ত এরপরের আন্দোলনগুলো শান্তিপূর্ণ থাকবেনা। ক্যাম্পাস এখন অফিসিয়ালি বন্ধ তাই প্রশাসন প্রকৃতিগত ভাবে এর সুবিধাটি পেয়ে গেছে৷ ঈদের পরেই প্রশাসনকে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে এবং ছাত্ররা আরও কঠোর হবে৷
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যখন উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিই তখন তাদের পক্ষ হতে বলা হয়েছিলো তদন্তের বিষয়গুলো একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়৷ তাই একটু সময় লাগতে পারে। আর এখন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আন্দোলন করাও সম্ভব নয়। আমরা দেখবো এই বন্ধের ভেতরে প্রশাসন কতটুকু কাজ করে৷ প্রশাসনের ঢিলেমি থাকলে আমরা ক্যাম্পাস খুললে আবারও আন্দোলন করবো৷
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা এখনও কাজ শেষ করতে পারিনি। তবে আমরা প্রতিদিনই এটা নিয়ে বসছি। এর আগে বর্তমান ও সাবেক প্রক্টর, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান, তৎকালীন প্রভোস্ট ও একজন হাউট টিউটরের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিলো। নতুন কিছু তথ্যের জন্য তাদের পুনরায় ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জবি ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস উপাচার্যের
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, সাত দিনের ভেতরে রিপোর্ট দিলে সেই রিপোর্ট অত্যন্ত কাঁচা হয়। যেহেতু রিপোর্টের কাজ চলছে, আমাদের শিক্ষকরা কেউ বসে নেই৷ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করছেন। ইতোমধ্যে কয়েকবার কুমিল্লাতেও গিয়েছেন তারা৷ আশা করছি ঈদের পরপরই আমরা রিপোর্ট হাতে পাবো।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রঞ্জন কুমার দাস।
এর আগে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় অবন্তিকা গলায় রশ্নি বেধে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর ১০ মিনিট পূর্বে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন। এরপর থেকেই অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।