পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। দেশে নারীদের জন্য আরও বেশি অনিরাপদ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হন।
রবিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্লাস্ট আয়োজিত 'যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নিদের্শনা: বর্তমান অবস্থা ও বাস্তবায়নে করণীয়'—শীর্ষক মতবিনিময় সভায় একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
সভায় আলোচকরা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিদের্শনার পরও সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি না হওয়া দুঃখজনক। নীতিমালার কারণে অনেকক্ষেত্রেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। সেজন্য এ বিষয়ে যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের প্রস্তাবও তুলে ধরা হয় আলোচনায়। বেসরকারি আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
গবেষণার ফলাফল তুলে সভায় জানানো হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ শতাংশ এবং মেডিকেল কলেজে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৪ শতাংশ ছাত্রী। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, হয়রানি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হচ্ছেন ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অশালীন, ক্ষতিকর মন্তব্যের মাধ্যমে ৫৭ শতাংশ নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে সভায় জানানো হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫০ শতাংশের বেশি নারী অনলাইনে সহিংসতার শিকার হন। এসময় আলোচনায় দেশের উচ্চ শিক্ষালয়গুলোতে চলমান এ সমস্যা সমাধানে নানা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
আরো পড়ুন: প্রদীপের নিচেই অন্ধকার
জরিপ অনুযায়ী, নিজ শ্রেণীর নয়, অন্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই ছাত্রীদের বেশি হয়রানি করেন। দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্রী তাঁদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। আর ছেলে সহপাঠীদের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ এবং ক্যাম্পাসে আসা অন্য পুরুষদের মাধ্যমে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ছাত্রী হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া নিজেদের বিভাগ ও অন্য বিভাগের পুরুষ শিক্ষকদের মাধ্যমেও ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। ক্লাস চলাকালীন, ক্লাস না থাকার সময়, করিডর, খেলার মাঠ প্রভৃতি স্থানে হয়রানির ঘটনা ঘটে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না। সভায় আলোচনা করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ব্লাস্টের ট্রাস্টি তাহমিনা রহমান প্রমুখ।