ধাক্কা ছাড়া চালু হয় না বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিআরটিসি বাস
কাগজে-কলমে ফিটনেস থাকলেও বাস্তবে খুবই নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিআরটিসি বাসগুলো। নিজ থেকে যান্ত্রিক শক্তিতে চালু হওয়ার সক্ষমতা নেই যানগুলোর। ফলে বাসগুলো চালু করতে দিতে হয় ধাক্কা। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বরিশাল ক্লাবের এক নম্বর রুটের চার, পাঁচ ও ছয় নম্বর বাসের। সর্বশেষ চলতি মার্চের শুরুতেও বরিশাল ক্লাব এক নম্বর রুটের পাঁচ নম্বর বাসটি চালু করতে হয়েছে ধাক্কা দিয়ে।
ধাক্কা দিয়ে বাস চালু করার এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওতে দেখা দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা বাসটি চালু করতে ধাক্কা দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার ১৪ মার্চে বরিশাল ক্লাব থেকে বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসার কথা বিআরটিসি ৫ নম্বর বাসটি, কিন্তু চালু হচ্ছিল না বাসটি। পরে শিক্ষার্থীরা বাসটি ধাক্কা দিয়ে চালু করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ২০২২ সালে বিআরটিসির একক কোচ ও দ্বিতল কোচ-সমৃদ্ধ বাসের ফিটনেস নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ঘষামাজা আর রঙের কারসাজিতে বাসের চেহারা পরিবর্তন হলেও উন্নতি হয়নি যান্ত্রিক সক্ষমতার। ফলে প্রতিনিয়তই খারাপ হতে থাকে যানগুলোর ফিটনেস। এতে নিজেদের ক্লাস-পরীক্ষায় সময়মতো অংশগ্রহণ নিয়ে সবসময়ই দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয় বাসগুলোতে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের।
তবে বিআরটিসি বাসের খারাপ অবস্থার বিষয়ে আমারা জানা নেই। আমরা বিআরটিসির সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি, আমি বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করে সমাধান করতে পারবো—মো. মেহেদী হাসান, ম্যানেজার, পরিবহণ পুল, ববি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান শোভন জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। আমরা নাহয় বাসটা একটু ঠেলেই দিলাম। ফিটনেসবিহীন এই বাস বন্ধের দিনে পার্ট-টাইম কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিআরটিসি বাসগুলো মেরামত বা পরিবর্তন করা জরুরি। নাহলে ব্রিজের ঢালে যেকোনো সময় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে আনা নেওয়ার জন্য ২২টি বাস কোনোভাবেই পর্যাপ্ত না। এর মধ্যে আবার এসব বাসে সেবা প্রদান করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরও। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিআরটিসির বাসগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আরও সজাগ হওয়া দরকার। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসের সংখ্যা বাড়ানো উচিত বলেও মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: ফুলের মাঝে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির ছবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী পরিবহণ ও তার ব্যবস্থাপনায় এতো সংকটের পরও দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে ‘ধানসিঁড়ি’ নামের একটি বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন এ যানটি সারিয়ে নিতে কোনো উদ্যোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ পুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে আমাদের প্রতিবছর গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক লক্ষ টাকা বাজেট দেয়া হয়। ‘ধানসিঁড়ি’ নামের যে বাসটি অচল অবস্থায় রয়েছে—সেটি মেরামতে এর চেয়ে বেশি অর্থ দরকার। গাড়িটির ইঞ্জিন ভালো রয়েছে, বাজেট বাড়ালে এটি মেরামত করা যাবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি বহরে বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য ইউজিসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে একই দপ্তর থেকে।
তবে বিআরটিসি বাসের খারাপ অবস্থার বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ পুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার মো. মেহেদী হাসান। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেছেন, ধাক্কা দিয়ে বাস চালু করতে হয় এমন বিষয় আমার জানা নেই। আমরা বিআরটিসির সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি, আমি বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করে সমাধান করতে পারবো।
পরিবহণ পুলের দাবি অনুযায়ী, শিক্ষার্থী অনুপাতে বাস সংখ্যা পর্যাপ্ত হলেও শিক্ষার্থী ও চালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক জানিয়েছেন, দিনের শেষ দিকের ট্রিপগুলোতে গাড়ি ওভারলোড হয়ে যায়। ফলে গাড়ি চালাতেও বেশ বেগ পোহাতে হয় আমাদের। ২৮ সিটের মিনিবাসে যখন ৫৬ থেকে ৫৮ জন উঠে তখন অনেক সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে হয়। শিক্ষার্থীরা বাসের মধ্যে জায়গা না পেয়ে প্রায়ই ঝুলে যাতায়াত করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার বহরে নতুন তিনটি বাস যুক্ত করা হলেও কাটেনি পরিবহণ সংকট। এর বাইরে রয়েছে চালকসহ নানা সংকটও।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) পরিবহণ পুলের সহকারী প্রকৌশলী (ট্রান্সপোর্ট) মো. জাহিদ হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, বিআরটিসি বাসগুলো ভাড়া নেওয়া। এই সকল বাসের চালক ও মেরামত সবকিছু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব বাস আছে মোট ২২টি। তারমধ্যে ৫২সিটের বড় বাস ৬টি। আর বিআরটিসি দ্বিতল বাস ৭৫আসনের ৭টি এবং ৫২ আসনের তিনটি বাস রয়েছে। যেগুলো বিআরটিসিদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়।
মো. জাহিদ হাসান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস থাকার কথা ৩৫টি, সেখানে রয়েছে ২২টি। করোনাকালীন সময়ে ব্যয় সংকোচ নীতির কারণে নতুন বাস ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। তবে পরবর্তীতে কয়েকটি বাস পরিবহণ পুলে যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও পরিবহনের ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন (বিআরটিসি) থেকে চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতল বাস ও বড় বাস প্রয়োজনমতো কর্তৃপক্ষ নেয় বলেও জানান তিনি।