১৩ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৫

দুই ভবনের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তিন শিক্ষক

প্রশাসনিক ভবন ও কলা ভবনের তালা ভাঙেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক  © টিডিসি ফটো

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে দুই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোয় শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনসহ ৫ ভবনে তালা দিয়ে অবস্থান নেন। তবে এর মধ্যে দুটি ভবনের তালা ভেঙ্গে ফেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। 

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও কলা ভবনে এ ঘটনা ঘটে। তালা ভাঙার নেতৃত্বে থাকা শিক্ষকরা জানান, শিক্ষার্থীদের অরাজকতা রুখতে এই কাজ করেন তারা।

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছেন এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা তা বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলা অনুষদ ভবনের তালা ভেঙেছেন ফোকলোর বিভাগের প্রভাষক মো. রকিবুজ্জামান ও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ কে এম মাসুদুল মান্নান। এরপর সেখানে শিক্ষার্থীরা গেলে ওই শিক্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং শিক্ষকরা রোষানলে পড়েন। সেখান থেকে শিক্ষকদের উদ্ধার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহ।

ধস্তাধস্তিতে জড়ান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা এসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।

এছাড়া প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের দেয়া তালা ভাঙেন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমান খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে অনেক শিক্ষকরা ছিলেন। প্রশাসনিক ভবনের কার্যক্রমের যে অচলাবস্থা ছিল সেটাকে ঠিক করতে শিক্ষকরা মিলে আমরা তালা ভেঙেছি।

তালা ভাঙায় জড়িত ফোকলোর বিভাগের প্রভাষক মো. রকিবুজ্জামানের বিরুদ্ধেও এর আগে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। সে অভিযোগের তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এর পর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষকদের বহিষ্কার দাবি করে ৫ ভবনে (কলা, বিজ্ঞান, প্রশাসনিক, প্রক্টর ও ব্যাংক) তালা দেয় তারা।

অভিযুক্ত দুই শিক্ষক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও সাজন সাহা

এরপর এদিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তবে ‘বাধ্যতামূলক ছুটি’র ব্যবস্থাকে প্রহসন বলে আখ্যা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা উভয় শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেছেন। 

এর আগে, অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের আশ্বাসে আস্থা রেখে পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন এবং আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন। এরপর আজ ফের আন্দোলন শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই দুই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া ব্যবস্থাকে প্রহসন উল্লেখ করে ওই দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি তোলেন। তারা বলেন, তারা বাধ্যতামূলক ছুটি মানতে চান না। শিক্ষার্থীরা দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে কলা অনুষদ ভবনের সামনে এদিন দুপুরের পরে সাজন সাহা ও শুভ্রর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। এরপর তিন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ৫ ভবনে তালার মধ্যে দুটি ভবনের তালা ভেঙে ফেলেন।

 প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর অফিস ও ব্যাংকসহ ৫ ভবনে তালা দেন শিক্ষার্থীরা

গত ৪ মার্চ শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রথম হেনস্তার বিষয়টি সামনে আসে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অংক বুঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা ও প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় নম্বর কমিয়ে দেওয়া এবং থিসিস রিপোর্ট তৈরিতে হয়রানি করার অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।

ছাত্রীদের শাড়ি পরে তার সঙ্গে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছবি চাওয়া, রিকশা নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, ক্যাম্পাসের বাইরে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নিমন্ত্রণ, ম্যাসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ভিডিওর লিংক শেয়ার করার মতো নানান অভিযোগ আসে শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাজন সাহার কাণ্ডে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন বিভাগীয় প্রধান শুভ্র।