ঢাবিসহ ৭ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-ইফতারের ঘোষণা

ইফতারের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইফতার পার্টির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গণ ইফতারের ঘোষণা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রমজানের প্রথম দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ ইফতার করবেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা টিএসটিতে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ডেইরিগেটে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা শান্ত চত্বরে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এবং রাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসটিতে গণ ইফতার কর্মসূচি পালন করবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান বলেন, দেশের দুইটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ক্যাম্পাসে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ইফতার পার্টি নিষিদ্ধ করেছে। তারা দেশ থেকে ইসলামী সংস্কৃতিগুলো বাদ দিতে পাঁয়তারা করছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এজন্য আজ গণ ইফতার কর্মসূচি গ্রহণ করেছি এবং সবাইকে আমাদের ইফতার কর্মসূচিতে আসার দাওয়াত দিচ্ছি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জাহিদ এইচ. জোহা বলেন, বাঙালির চিরায়ত মুসলিম সংস্কৃতি রমজান, সেহরি ও ইফতার। এই সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রীতির উপর হস্তক্ষেপ কখনও কাম্য নয়। সম্প্রতি শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দুই ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংহতি জানিয়ে আমরাও আয়োজন করছি গণ ইফতার কর্মসূচি। আগামীকাল আসরের নামাজের পরই আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি পালন করব। সবাইকে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, বাঙালির চিরায়ত মুসলিম সংস্কৃতি রমজান, সেহরি ও ইফতার। এই সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রীতির উপর হস্তক্ষেপ কখনও কাম্য নয়। সম্প্রতি শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দুই ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংহতি জানিয়ে আমরাও আয়োজন করছি গণ ইফতার কর্মসূচি। আজ আসরের নামাজের পরই আমাদের টিএসসিতে এ কর্মসূচি পালন করব। সবাইকে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তারা আরও জানায়, সকলের জন্য ইফতার  ব্যবস্থা থাকবে এবং মেয়েদের জন্য আমরা আলাদা বসার ব্যবস্থা ও করেছি।

শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, আমার মনে হয় কোনো একটা ইস্যুকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য দুই বিশ্ববিদ্যালয় এই জঘন্যতম কাজটা করেছে। শিক্ষার্থীরা তো আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নের কাছে কোনো ফান্ডিং চাইনি। তাহলে নিষিদ্ধের কথাটা কেন আসলো? এটা খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ করেছে

তিনি আরো বলেন, রোজা, ইফতার মুসলিমদের জন্য খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয়। ইফতার ধর্মীয় গণ্ডি পেরিয়ে সার্বজনীনতায় রূপ নিয়েছে। সেই ইফতারিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যেমন আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, তেমনি আমাদের সংস্কৃতির উপরও আঘাত করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে গণ-ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছে এটাকে আমি প্রশংসা করছি। প্রতিবাদ এভাবেই করা উচিত। আমি যদি সুযোগ পাই তাহলে কালকে রাবি শিক্ষার্থীদের আয়োজিত গণ-ইফতার কর্মসূচিতে আমি অংশগ্রহণ করব।

এর আগে সোমবার (১১ মার্চ) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অভ্যন্তরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার উল্লেখ করে এবার ইফতার পার্টি আয়োজন না করার অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে আসন্ন রমজান মাসে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।


সর্বশেষ সংবাদ