গবেষণাপত্র কিনেছেন কুবি উপাচার্য—অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনের কিউ ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র টাকায় কেনা বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
বুধবার (৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে এমন মন্তব্য করেন তারা।
একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায়, নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণার পর কার্যালয় ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ফের উপাচার্যের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান শিক্ষকরা। এসময় উপাচার্য উপস্থিত শিক্ষক নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাকে যারা নিয়োগ দিয়েছে তারা আমার যোগ্যতা দেখে নিয়োগ দিয়েছে। এখন আমি যাদের নিয়োগ দেবো তাদের যোগ্যতা আমি দেখবো। আর এটাই নিয়ম। আপনাদের কোন আর্টিকেল লিখতে দিলে আপনারা পারেন না। কি শিক্ষকতা করবেন? কোন যোগ্যতা নেই।
তখন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, কে বলেছে আর্টিকেল লিখতে পারে না। আপনি এমন মিথ্যাচার করতে পারেন না। আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন। কারণ আপনি শিক্ষকদের অপমান করেছেন।
প্রতিউত্তরে উপাচার্য জানান, 'আপনি কে আমাকে পদত্যাগ করতে বলার।' এছাড়াও 'আপনারা টাকা দিয়ে আর্টিকেল নিয়ে আসেন, নকল আর্টিকেল নিয়ে আসেন' এমন মন্তব্য করতে শোনা যায়।
তখন শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য কাজী কামাল উদ্দিন সহ কয়েকজন উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার আপনার কিউ ওয়ান আর্টিকেল তো টাকা দিয়ে কেনা।
পরে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রক্টরের মুখোমুখি হয়ে 'স্টপ দিস ডাস্টবিন, দিস ইজ কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি।' তখন উপাচার্য বলেন, 'আপনি কি বলেছেন। আই উইল টেক ইউ দ্য রাইট প্লেস' বলে গাড়িতে উঠে চলে যান।
এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জেনেছি তিনি ৩০ বছরে একটিও কিউ ওয়ান (Q1) গবেষণা করতে পারে নাই। তিনি হঠাৎ করে উপাচার্য হওয়ার পর মালয়েশিয়ার একজনের সাথে আঁতাত করে এবং টাকা দিয়ে এটি কিনেছেন এবং এটি ওনার নিজের কাজ না। উপাচার্যের অধ্যাপনা জীবনে একটিও গৃহীত প্রকাশনা নাই। যা উনি স্বীকার করেছেন। তো হঠাৎ কিউ ওয়ান (Q1) জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ বিষয়টা কেমন না।
তিনি আরও বলেন, উপাচার্য বলেছেন শিক্ষকরা টাকা দিয়ে গবেষণা পেপার পাবলিশ করেছে। আমি উনাকে বলবো যদি উনি এটা প্রমাণ করতে পারেন শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বলছি, তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করবো না। আর যদি উনি এটা প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।
এর আগে সকাল ১০টায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দুইজন বোর্ড সদস্য সেখানে উপস্থিত হননি। পরে সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্য প্রক্টরিয়াল বডি সহ পরীক্ষা পরিচালনা করার চেষ্টা করলেও শিক্ষক সমিতির বাঁধায় সেটি সম্ভব হয়নি।
এদিকে Q1 জার্নালের বিষয়ে একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফায়েল হোসেন মজুমদার বলেন, উপাচার্য যেই ইউনিভার্সিটির সাথে এমওই করেছেন সেখানকার ডিন প্রফেসর লীম এর সাথে উনি থার্ড অথর হিসেবে কিউ ওয়ান (Q1) করেছেন। এটা ক্লিয়ারলি বুঝা যায় যে এখানে একটা কানেক্টিভিটি আছে। কেননা এর আগে প্রফেসর লীমের সাথে তার কোনো গবেষণা পেপার নেই।
তিনি আরো বলেন, তিনি বিবলোমেটিক সফটওয়্যার নিয়ে এক শিক্ষকের সাথে কথা বলেন। তখন ওই শিক্ষক বলেন যে স্যার আপনার পেপারেই তো এটা আছে। তখন উপাচার্য বলেন তিনি মেথডোলোজি লিখেছেন। কিন্তু ওনার মেথডোলজিতেই ওই সফটওয়্যারের কথা বলা আছে। এ থেকেই বুঝা যায় যে উনি পেপারটা নিজে লিখেন নাই। আসলে উনার ওই পেপার লেখার মতো এবিলিটিও নাই। কারণ উনার এর আগে কিউ ওয়ান তো দূরে থাক, কিউ ফোরেও উনার কোন পেপার নেই।