০৩ মার্চ ২০২৪, ২০:০০

শিক্ষাগত উদ্ভাবনই পারে পরিবেশের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে: ইউজিসি চেয়ারম্যান

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে উন্নয়নের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে না পারলে নাগরিক ও সমাজের জন্য উন্নয়ন ভালো ফল বয়ে আনতে পারবে না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র শিক্ষাগত উদ্ভাবনই পারে পরিবেশের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে। সুতরাং যে কোনো উন্নয়নের জন্য পরিবেশগত সমস্যা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রধান দিক হওয়া উচিত।

রবিবার (৩ মার্চ) সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন আয়োজিত পরিবেশের ওপর ‘টাইম ফর ন্যাচার এন্ড ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এক অডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মান সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে উচ্চশিক্ষায় মানসম্পন্ন গবেষণাকে উৎসাহিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগ গবেষণার গুণগত মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, নতুন ধারণা, উদ্ভাবন এবং মূল গবেষণার ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে গবেষণার মান বাড়ানোর জন্য এই সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে তরুণ গবেষকরা অন্যান্য গবেষকদের সাথে, বিশেষ করে একই ক্ষেত্রে কাজ করা সিনিয়রদের সাথে মতামত বিনিময় করার সুযোগ পান। এটি গবেষণার মান উন্নত করতে সহায়তা করে। 

অনুষ্ঠানে চিফ প্যাট্রন হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে আমাদের জীববৈচিত্র্যের একীকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশমনের জন্য বিভিন্ন নীতি, পরিকল্পনা এবং কর্মসূচি রয়েছে। এই ধরনের সম্মেলন গবেষক-বিজ্ঞানীদের একত্রিত করার পাশাপাশি নতুন নতুন ধারণা ও পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণে সহায়তা করবে। তিনি আরও বলেন, এই সম্মেলন থেকে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ইকোসিস্টেম পরিষেবা, সামাজিক সুবিধা এবং জৈবিক সম্পদ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন আয়োজিত এই সম্মেলন নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানী তথা নবীন শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের নানামুখী উপকারে আসবে এবং তারা গবেষণায় অনুপ্রাণিত হবেন। তিনি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি গবেষক ও বিজ্ঞানী এবং আয়োজক কমিটিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। 

প্যাট্রন হিসেবে বক্তৃতা করেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ। অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বায়োডাইভারসিটি-সেক্টর ডয়েচে গেসেলশ্যাফ্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল জুসামেনারবিট (জিআইজেড) জিএমবিএইচ এর কো-অর্ডিনেটর এবং এসওএনজি’র চিফ এডভাইজার ড. স্টেফান আলফ্রেড গ্রোইনওল্ড। সম্মেলনে গৃহীত ৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন সম্মেলনের অরগানাইজিং সেক্রেটারি ও সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরি।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ডেলিগেটদের পক্ষ থেকে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. মো. খায়রুল আলম, দ্য স্পেস রিসার্চ সেন্টার অব দ্য পোলিশ এর একাডেমি অব সায়েন্স ড. ম্যালগোরজাটা জেনরোভিচ-সানিকোস্ক, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল স্ট্যাডিজ বিভাগের ড. শ্রীনিবাসন বালাচন্দ্রন, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জগৎপতি তাহ, নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ড. গোবিন্দ প্রসাদ শর্মা। বিদেশি অতিথিবৃন্দ সম্মেলন সফল ও আতিথেয়তা চমৎকার বলে আখ্যায়িত করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক রাবেয়া সুলতানা।

এই সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পোল্যান্ড, ইতালি এবং জার্মানি থেকে থেকে ২৪৫ জন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে ১২৮টি ওরাল প্রেজেন্টেশন, ৪৮টি পোস্টার প্রেজেন্টেশন, ৬টি কি-নোট পেপারসহ ১৮৩টি গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনে টেকনিক্যাল সেশনের বেস্ট স্পিকার অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট পোস্টার অ্যাওয়ার্ড এবং আউটস্ট্যান্ডানিং রেজাল্টস এর পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। অংশগ্রহণকারী গবেষক-বিজ্ঞানীরা দুপুরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেন।