বৃষ্টি নাকি অভিশ্রুতি— ইডেনছাত্রীর লাশের সুরাহা হয়নি আজও
ধর্মীয় ও নাম-পরিচয় জটিলতায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের মর্গে পড়ে আছে বৃষ্টি খাতুনের লাশ। তার মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। মরদেহ নিতে এসে বিপাকে পড়েছেন তার পরিবারের সদস্যরাও। শনিবার (২ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।
পারিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের স্কুলে। উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে। সম্প্রতি তিনি কলেজটির দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতক পরীক্ষা দিয়েছেন।
ঢাকার মৌচাকের সিআইডি অফিসের বিপরীতে একটি মেসে থাকতেন বৃষ্টি। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন। তারা তিন বোন। অভিশ্রুতি সবার বড়। মেজ বোনের নাম ঝর্ণা খাতুন ও ছোট বোনের নাম বর্ষা খাতুন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তার মরদেহ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হয়।
তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বনগ্রামে। তার বাবার নাম শাবলুল আলম সবুজ। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। এ তথ্য জানিয়েছেন তার পরিবার, স্বজন ও বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ। বাবা শাবলুল আলম সবুজ এবং মা বিউটি বেগম ইসলাম ধর্মের অনুসারী।
তবে ওই তরুণীর বায়োডাটায় দেখা গেছে, তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী। সন্তান হারিয়ে শোকাহত বৃষ্টির মা বিউটি বেগম। শনিবার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে প্রতিবেশী ও স্বজনের ভিড়। ঘরের ভেতরে বসে আছেন বিউটি বেগম। তিনি কেঁদেই যাচ্ছেন।
অভিশ্রুতির গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম
স্বজনেরা বলছেন, দুই দিন ধরে মেয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। মেয়ের পাওয়া ক্রেস্ট ও ছবি বুকে ধরে কাঁদছেন। মাঝেমধ্যে চিৎকার করে উঠছেন, ‘আমার মেয়ে কই, তাঁকে আমার কাছে এনে দাও। আমি তাঁর মুখটা দেখব।’
ছোট মেয়ে বর্ষা ও প্রতিবেশীরা বিউটি বেগমকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আহাজারি করতে করতে বলছেন, ‘আমার মেয়ে, ওর নাম বৃষ্টি’ বলে মূর্ছা যাচ্ছেন। বাড়িতে আসা সাংবাদিকদের কাছে তিনি আকুতি জানাচ্ছেন, ‘আমার মেয়ের লাশ ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাত পাতছি।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের একটি সূত্র জানায়, মরদেহটিকে রমনা কালি মন্দিরের পুরোহিত অভিশ্রুতির মরদেহের দাবি করেন। তিনি জানান, আট মাস ধরে রমনা কালী মন্দিরে হিন্দু ধর্মের অনুসারী হিসেবে যাতায়াত ও প্রার্থনা করতেন অভিশ্রুতি। এমন কি মন্দিরে নিজেকে সনাতন ধর্মেরও পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের মর্গ থেকে নিহতের মৃত্যুসনদ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নিহত সাংবাদিকের নাম বৃষ্টি খাতুন উল্লেখ করা হয়েছে। বাবার নাম লেখা হয়েছে সবুজ শেখ। ঠিকানা কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা।
লাশ হস্তান্তর হবে আদালতের সিদ্ধান্তে
ডিএনএ পরীক্ষা ও আদালতের নির্দেশ ছাড়া সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুনের লাশ হস্তান্তর করা হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের কিছুই আর করার নেই। আমরা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাবা পরিচয়ে কুষ্টিয়ার সবুজ শেখ মরদেহ নিতে চেয়েছেন। এদিকে, রমনা কালী মন্দির কর্তৃপক্ষও মরদেহটি দাবি করেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত এখন আদালতের মাধ্যমে নিতে হবে। কেউ যদি মরদেহ নিতে চায় তাহলে আদালতে আবেদন করতে হবে।