বসন্তবরণে সাজছে তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস
“আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়, আহা আজি এ বসন্তে।” বসন্ত রাঙা ফাগুনের কোনও একদিনে হয়ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ গানটি লিখেছিলেন। বসন্ত আসতে আর মাত্র কিছু সময় বাকি। তারপরেই একসঙ্গে সবায় গাইবে বসন্তের গান ‘বসন্ত এসে গেছে’। সাজবে সবাই নতুন সাজে।
এই ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর তিতুমীর কলেজ সাজছে বর্ণিল সাজে। শীতকালে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে গজাচ্ছে নতুন পাতা। প্রকৃতি ছেয়ে যাচ্ছে সবুজ শ্যামলে। ভাগ্য ভালো থাকলে হয়ত পাতার ফাঁকে শোনা যাবে বসন্তের কোকিলের কু-হু-কু-হু গান। সময়ের সাথে সাথে ফুলে ফুলে ভরে যাবে গাছগাছালি। ফুটবে লাল টুকটুকে পলাশ। বসন্তকে কেন্দ্র করে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মাতবে বসন্ত বরণ উৎসবে।
তিতুমীর কলেজ আর্ট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাইমুর রহমান নয়ন বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও তিতুমীর কলেজের নবান্ন ও বসন্ত উৎসব পালন করা হচ্ছে তবে এবারের উৎযাপন একটু ভিন্ন ও বড় পরিসরে পালিত করা হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে তিতুমীর আর্ট ক্লাব তাদের কেন্দ্রমুখী আকর্ষন পিঠা উৎসব ও বসন্ত বরণ উৎসবের সাজসজ্জার কাজে নিজেদের মাতিয়ে রেখেছে।
আর্ট ক্লাব যে কাজ গুলো করেছে তার পুরো থিমটাই নবান্ন ও বসন্ত কে কেন্দ্র করে করা হবে। নবান্ন ও বসন্ত কে ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন আর্ট, হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, ক্রাফট, স্কাল্পচার সহ বিভিন্ন ভাবে নিজেদের নান্দনিক শৈল্পিক মনোভাবনার পরিচয় দিবে। আপনাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানাই আমাদের এই বাঙালি উৎসব বরণে ।
আর এই বসন্তবরণ উৎসবেকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তুলি দিয়ে রং মেখে রাঙাচ্ছেন হাড়ি। যা সখের হাড়ি বলেই পরিচিত। এসব হাঁড়িতে ফুটে উঠছে বিভিন্ন ফুল-ফলের চিত্রসহ গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি। আবার বাঁশ, বেত, খড়, বাঁশের চাটাই দিয়ে গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য। শুধু যে বসন্ত বরণ উৎসব এমনটি নয় চলছে পিঠা উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে পিঠার স্টল। সাংস্কৃতিক অঙ্গসংগঠনের প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে।
সাংস্কৃতিক সংগঠন শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ইসলাম শান্ত বলেন, ঋতুরাজ বসন্ত দুয়ারে দাঁড়িয়ে। প্রতিবারের মতো বসন্ত উৎসব ১৪৩০-এ থাকছে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ এর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বাঙালি ঐতিহ্যকে লক্ষ্য রেখেই সাজানো হয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আগত দর্শক নাচ, গান ও আবৃত্তির পশরায় মুগ্ধ হবেন আশাকরি। তিতুমীর কলেজ প্রাঙ্গণে বর্ণিল সাজে থাকবে পিঠাপুলির স্টল ও নান্দনিক মঞ্চ সজ্জা। যেখানে সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাদের নান্দনিক পরিবেশনা উপহার দেবে। আপনাদের সবিনয়ে আগমন জানাই। আসুন বাঙালি উৎসবকে বরণ করে নেই। বিগত ৬ বছর তিতুমীর কলেজে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ এই বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে।
বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসব সম্পর্কে তিতুমীর বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. রতন সিদ্দিকী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমরা খুব আনন্দিত আমাদের কলেজে এতো বড় করে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। বাঙালির ঐতিহ্যে যে সংস্কার দরকার এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংস্কৃতির চর্চার প্রয়োজন। আমি মনে করি এই বসন্ত বরণ এবং পিঠা উৎসব সংস্কৃতি চর্চার একটি অংশ। আগামীতে এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।
উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহের বলেন, উৎসবকে ঘিরে আমাদের প্রস্ততি প্রায় শেষপ্রান্তে। কে কোন পিঠা বানাবে সেটির দায়িত্বও ইতোমধ্যেই ভাগ করে দিয়েছি। এদিন নানান পদের মুখরোচক পিঠা পুলি আমাদের স্টলে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমি ক্যাম্পাসের হলেই থাকি সেহেতু আমার তৈরিকৃত পিঠাগুলো বানানোর প্রস্ততি আমি হলেই নিচ্ছি। উৎসবের দিন সকল শিক্ষার্থীদের পিঠা কিনে খাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বাংলা বিভাগের স্টল থেকে সর্বোচ্চ পিঠা বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।