যবিপ্রবির শমর হলে আট দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শহীদ মসিয়ূর রহমান (শমর) হলে অতিরিক্ত হল ফি প্রত্যাহারসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানের দাবি জানায় হলের শিক্ষার্থীরা।
শমর হলে স্নাতক ২০১৭-১৮ সেশন থেকে এক বছরে দুই বার হল ফি আদায়ের পর আরও একবার টাকা জমা দেওয়ার নোটিশ দিয়েছে হল প্রশাসন। এটি প্রত্যাহার সহ আট দফা দাবিতে রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টায় যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের নিচে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলো হলো—শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের পাঠ মূল্যায়ন চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মঞ্চে নৃত্য প্রদর্শনের সময় ডিম মারার ঘটনায় দোষীদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের এমবিএ তে ভর্তির সুযোগ, ২৪ ঘণ্টা আবাসিক জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ অন্যান্য দাবি।
মানববন্ধনের পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে উপাচার্যের একান্ত সচিব আব্দুর রশিদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে (২৫ জানুয়ারি) রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে এক শিক্ষার্থীর নাচ প্রদর্শনের সময় প্রায় ২০-২৫ টি ডিম নিক্ষেপ করা হয়। এই ধরনের কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সংস্কৃতির উপর আঘাত। ডিম নিক্ষেপের ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ২০২৩ সালে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ুর রহমান হলে ২০১৭-২০১৮ সেশনের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের এক বছরে দুইবার হল ফি নেওয়া ও একই বছরে মোট তিনবার হল ফি দেওয়ার অযৌক্তিক নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ সেশনের যারা স্নাতকোত্তরের ভর্তি হবে তাদের ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১০৯৫ টাকা দিতে হবে মর্মে নোটিশ প্রদান করেন শহীদ মসিয়ূর রহমান হল প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ। এরপর এপ্রিল-মে মাসে স্নাতকোত্তরে ভর্তির সময় একবছরের জন্য আবারও ২৪৯০ টাকা জমা নেয় হল প্রশাসন। সে হিসেবে পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সেসব শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে পরার কথা। কিন্তু ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর আবারও জুন পর্যন্ত থাকার জন্য ১০৯৫ টাকা দিতে নোটিশ জারি করে হল প্রশাসন।
শিক্ষার্থীরা এটিকে অযৌক্তিক দাবি করে হল প্রশাসনের কাছে প্রত্যাহারের দাবি জানান। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি হল প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন নূহ (আঃ) এর সময় থেকে নোটিশ আসছে হলে (শ.ম.র হল), তাই তোমাদের টাকা দিতে হবে। এর প্রেক্ষিতে আরও সাত দফা দাবিতে আজ মানববন্ধন করে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
এবিষয়ে হল প্রভোস্টের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি।
এমবিএ এর বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার্স অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) চালু করতে হবে। এটি হলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হবে কারণ অন্যান্য বিভাগ থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন চাকুরি করলেও উচ্চ পদগুলোতে আবেদনের করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমবিএ ডিগ্রি চায়। ফলে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। যবিপ্রবির অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও এমবিএ তে ভর্তির সুযোগ প্রদান করতে হবে।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিগুলো: শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের পাঠ মূল্যায়ন চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার্স অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) চালু করা এবং চলতি বছর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট (এমজিটি) বিভাগে এমবিএ ইন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট চালু করা।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পারফর্ম চলাকালে ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা, ২০২৩ সালে শহীদ মসিয়ুর রহমান হলে ২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতকোত্তরের সকল শিক্ষার্থীদের এক বছরে দুইবার হল ফি নেওয়া ও একই বছরে মোট তিনবার হল ফি দেওয়ার অযৌক্তিক নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়া।
২৪ ঘণ্টা আবাসিক জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন ও কাফেটেরিয়া নিম্ন মূল্যে সঠিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার প্রদান করা, বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়ন ফির নামে অযৌক্তিক ফি চলতি বছর থেকে বন্ধ ঘোষণা করতে হবে ও প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মৌলিক গানের ব্যান্ডের জন্য নির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করা।