২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:২১

দেশি-বিদেশি ৫২০ জনের অংশগ্রহণে চবিতে আন্তর্জাতিক বায়োটেকনোলজি কনফারেন্স

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) যৌথ উদ্যোগে “আগামী প্রজন্মের জৈবপ্রযুক্তি: অসাধারণত্বের পথে”— প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক বায়োটেকনোলজি কনফারেন্স’।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টায় জীববিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে উদ্বোধনের পরে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় সমাপনী পর্বে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ ৫২০ জন অংশগ্রহণ করেন। অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ভারতসহ পৃথিবীর ৮টি দেশের গবেষক এবং শিল্প উদ্যোক্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন৷ এই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীরা অংশগ্রহণ করেন।

বিভিন্ন আয়োজনের মাঝে ছিলো—উদীয়মান গবেষকদের উপস্থাপনা “ইয়ং ইমার্জিং বায়োটেকনোলজিস্ট”, গবেষণা থিসিস নিয়ে “স্পটলাইট টক”, নারী গবেষকদের “ওমেন ইন বায়োটেক”, প্লেনারি সেশন, পোস্টার প্রদর্শনী ইত্যাদি।

সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি এর সভাপতি ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময়কালে টেকসই উন্নয়ন এবং ভীষণ ২০৪১ বাস্তবায়নে জীবপ্রযুক্তির পরিচর্যা এবং প্রসারের কোন বিকল্প নেই। 

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (এমপি) সমাপনী বক্তব্যে দেশের শিল্পউদ্যোক্তাদের জীব প্রযুক্তি গবেষণায় বিনিয়োগ এর আহ্বান জানান। বিশেষ করে তিনি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি গুলিকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, করোনাকালীন সময়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তা প্রমাণ করে জীবপ্রযুক্তি গবেষণার গুরুত্ব কতটুকু। এই বিষয়ে গবেষণা আরও এগিয়ে নিতে তিনি উৎসাহ প্রদান করেন। এতে মূল বক্তা হিসাবে ছিলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক অধ্যাপক ড. উৎপল বোরা, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট (ইমিরেটাস) ড. রুবহানা রাকিবসহ পৃথিবী খ্যাত শতাধিক গবেষক এতে অংশগ্রহণ করেন।

বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ আলোচনা (প্লানারী সেশন) এ মূল বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক ড. উৎপল বোরা। তিনি নতুন প্রজন্মের ডিএনএ ড্রাগ কীভাবে রোগনির্ণয় এবং নিরাময় ত্বরান্বিত হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়া অধ্যাপক আল-ফোরকান ভীষণ ২০৪১ বাস্তবায়নে জীবপ্রযুক্তির ভূমিকা এবং পথরেখা কেমন হবে তা নিয়ে বিস্তারিত প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড.শিরীণ আখতার ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৫ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সভাপতি ড. একে আজাদ চৌধুরী।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, উপ-উপাচার্য  অধ্যাপক বেনু কুমার দে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদ হোসেন, এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন ড. রুভানা রাকিব, জনাব এন এম জিয়াউল আলম, ড. মো. সলিমুল্লাহ, ড. মোহাম্মদ আল- ফোরকান, অধ্যাপক ড লুলু ওয়াল মর্জান, অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান।

সম্মেলনের আলোচনা করা হয়, বিভিন্ন পর্যায়ে টেকসই জলজ জীবপ্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এবং সামুদ্রিক সম্পদের অব্যবহৃত সম্ভাবনা কাজে লাগানোর স্বরূপ অন্বেষণ করা, জীবন রহস্য উন্মোচন করতে এবং এ সম্পর্কিত গবেষণাকে ত্বরান্বিত করতে বড় ডেটা, কম্পিউটেশনাল উদ্ভাবন এর ব্যবহার, জীবপ্রযুক্তি-ভিত্তিক শিল্প উৎপাদনে অগ্রগতি।

আরও আলোচনা করা হয়, বায়ো-ফার্মাসিউটিক্যালস এর চাহিদা মেটানো, এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া, নতুন রোগনিরাময় কৌশল এর বিকাশ করা এবং অণুজীব জগতের গোপন রহস্য ব্যবহার করে নতুন প্রযুক্তি তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়া নিয়ে।

উদ্ভিদ, উদ্ভাবনী জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে সবুজ কৃষি বিপ্লবের স্বরূপ সন্ধান এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের জন্য উদ্ভিদ-ভিত্তিক সমাধান উদ্ভাবন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।