২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:০৬

অথচ শরিফ হিজড়া নয়, প্যাঁচটা এখানেই

পাঠ্যবইয়ে শরীফার গল্প  © সংগৃহীত

ক্লাস সেভেনের বইয়ে যে শরিফার গল্পটা আছে, সেটা সম্পর্কে দুটো কথা বলা যায়। এক, এটা যারা লিখেছে তারা একেবারেই নির্বোধ এবং মোটা বুদ্ধির লোকজন। কী বলছে, না বুঝেই বলছে। দুই, একদল অতি ধুরন্ধর মানুষ, যারা একেবারে পরিকল্পনা করেই প্যাঁচ কষেছে। আমার বিশ্বাস, দ্বিতীয়টিই সত্য।

এখন দেখতে পাচ্ছি, এই প্যাঁচে অনেকেই ধরাশায়ী হয়েছে। এদের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষকরাও আছেন। আছে তথাকথিত ফেসবুক বুদ্ধিজিবিরাও। সেই দিক থেকে প্যাঁচ কষাটা স্বার্থক বলা যায়। এদের বিভ্রান্তি আমাকে অবাক করেনি। জীবনের বড় অংশটা শিক্ষিত মানুষদের মাঝেই কেটেছে। এই দেশে ‘শিক্ষা’ এবং ‘অনুধাবনের ক্ষমতা’ দুটো ভিন্ন জিনিস।

প্যাঁচটার কথা বলি। খুব পরিষ্কার করেই বলা হয়েছে শরিফ শারীরিক দিক থেকে সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন। সে বায়োলজিক্যালি পুরুষ। মানসিক দিক থেকে সে নিজেকে নারী বলে মনে করে। এই আলাপের সূত্র ধরে চলে যাওয়া হয়েছে হিজড়া প্রসঙ্গে। অথচ শরিফ, হিজড়া নয়। প্যাঁচটা এখানেই।

হিজড়া সম্প্রদায় শারীরিক দিক থেকে আলাদা (ইচ্ছে করেই অসম্পূর্ণ/অস্বাভাবিক/ত্রুটিযুক্ত শব্দগুলো ব্যবহার করিনি)। শরিফ নিজেকে শরীফা পরিচয়ে ধারণ করে; এটা একটা মেন্টাল স্টেইট। হিজড়াদের সাথে তাকে মিলিয়ে ফেলা যায় না।

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব

যারা হিজড়া তারা জন্মগত ভাবেই ফিজিক্যালি ডিফারেন্ট। এই পার্থক্য তাদের জীবনকে কঠিন করেছে। একটি মানবিক এবং সুন্দর সমাজের দায়িত্ব তাদের জীবনকে আরও কঠিন না করা। তাদের সকল মানবিক অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া।

শরিফ/শরীফার ব্যাপারটা আলাদা। এখানেও তার মানসিকতার ব্যাপারে আমাদের কিছু করার আছে।  শরিফ/শরীফার জীবনও কঠিন। তার জন্য খারাপ ফিল করাতে দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু সে যেভাবে নিজেকে ভাবে, তাতে সামগ্রিক দিক থেকে প্রচুর সমস্যা আছে। 

একটা উদাহরণ দেওয়াই যথেষ্ট হবে। শারীরিক দিক থেকে নিখুঁত পুরুষ কিন্তু নিজেকে নারী ভাবে, এমন একজনকে কি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হলে একটি শেয়ার্ড কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া যাবে? দিলে কি তার রুম্মেট মেয়েটি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে? যদি না করে, তাহলে মেয়েটির অধিকার নিয়ে কি প্রশ্ন তোলা যাবে?

কাজেই দেখা যাচ্ছে, বিষয়টি সাধারণ হিজড়া ইস্যু থেকে মৌলিক দিক থেকেই অনেক আলাদা। এমন শত শত উদাহরণ দেওয়া যাবে। ক্লাস সেভেনের বইয়ে শরিফ/শরীফা অংশটুকু আসলে যা প্রোমোট করেছে তা নিছক হিজড়া সম্প্রদায়ের ব্যাপার নয়। এর পেছনে অন্য ব্যাপার আছে। এটুকু যাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তাদের বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। [ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়