তিন বছর আগে দাঁড়িয়েছে কাঠামো, বেরোবির স্থাপনাগুলো হবে কবে
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ১০ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন এবং স্বাধীনতা স্মারক হচ্ছে। তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থাপনার কাজ তিন বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ। পুনরায় করে কাজ শুরু হবে তাও জানা নেই কারও।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জোরদার কোনও উদ্যোগ না থাকায় অনিশ্চয়তায় রয়েছে এ তিন মেগা প্রকল্পের কাজ। এতে আবাসন সংকট ও গবেষণা কাজে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমস্যার সুরাহা করে দ্রুত কাজ শুরুর দাবি তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজে গতি আনতে এবং আবাসন সংকট নিরসনে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে তিন প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরে প্রকল্পের নকশা ও পরামর্শক পরিবর্তন এবং নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নতুন করে বরাদ্দের আবেদন জানানোর পর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ কারণে ইউজিসি নির্মাণ কাজ বন্ধ বন্ধ করে দেয়।
নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে গবেষণা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক উপাচার্য ড. এ কে এম নুর-উন নবীর সময়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগোচ্ছিল। তিন মেগা প্রকল্পের কাজে বেশ গতি ছিল। শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পাঁচ তলা পর্যন্ত এবং স্বাধীনতা স্মারকের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়।
২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে তিন প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরে প্রকল্পের নকশা ও পরামর্শক পরিবর্তন এবং নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নতুন করে বরাদ্দের আবেদন জানানোর পর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ কারণে ইউজিসি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
তবে পরবর্তী উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নির্মাণাধীন দুটি ভবনের নকশা পরিবর্তন ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি বরাদ্দের আবেদন করেন। ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবন নির্মাণ ব্যয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৬০ কোটি ৯৯ লাখ, শেখ হাসিনা হলের বরাদ্দ ৫১ কোটি ৩৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০৬ কোটি ৯৩ লাখ এবং স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ ব্যয় এক কোটি ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে চার কোটি ৩০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন ড. কলিমউল্লাহ।
এ ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে ইউজিসিকে তদন্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মন্ত্রণালয় প্রকল্পগুলোর কাজ বন্ধ হয়ে দেয়। এরপর থেকে অনিশ্চয়তায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ তিন মেগা প্রকল্পের কাজ। দীর্ঘ সময় পার হলেও কাজ শুরু করতে বর্তমান প্রশাসনের তেমন আগ্রহও দেখা যায়নি।
নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা প্রহরীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এতে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবনের রড, বাঁশ, কাঠসহ অন্যান্য সামগ্রী। এগুলো পরবর্তীতে আর ব্যবহার করা যাবে না।
আরো পড়ুন: সরকারি চাকরিতে বিষয় কোড না থাকা বিভাগের জন্য সুখবর ইউজিসির
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাথীরা বলছেন, উচ্চ শিক্ষার সুতিকাগার বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এখানে গবেষণা ও নতুন নতুন আবিষ্কার হবে। মেধাবীদের মিলনমেলা হবে। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ভবন না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মৌলিক কাজে আগ্রহী হচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষকরা। বন্ধ কাজ দ্রুত চালু ও প্রকল্পের অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও ছাত্র নেতারা।
মেগা প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা এবং তা চালু করতে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, ভৌত অবকাঠামো সংকট নিরসনে জন্য ৮৭৫ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের অনুমোদন পেলে ভৌত অবকাঠামগত সব সমস্যার সমাধান হবে।