ববিতে হা হা রিয়্যাক্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি, নেপথ্যে যা জানা গেল
ফেসবুকে হা হা রিয়্যাক্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) দুই শিক্ষার্থীর মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে গত ২৫ ডিসেম্বর রাত ১০টায়। ওই ঘটনায় আহত হন মারামারিতে জড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ২ শিক্ষার্থী। আহতরা হলেন একই বিভাগের সহপাঠী শান্ত ইসলাম আরিফ এবং জাকির হোসেন।
সেই ঘটনার পিছনে রয়েছে ঘটনা। জানা যায়, শান্ত ইসলাম আরিফের ছবিতে জাকির হোসেন হা হা রিয়্যাক্ট দেওয়ায় দুজনের মাঝে মেসেঞ্জারে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ভোলা রোডের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে দুইজন মারামারিতে জড়ায়। জাকির হোসেনের মুখমণ্ডলে ঘুষি মারেন শান্ত অপরদিকে শান্তর হাতের আঙুলে কামড় দেয় জাকির।
আরও জানা যায়, মারামারি শেষে সকলেই হাসপাতালে না গিয়ে তাদের বাসায় চলে যায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশ থেকে জাকিরকে হাসপাতালে যেতে বললে অস্বীকৃতি জানায় সে। এরপর হাসপাতালে না গেলে ছাত্রলীগ পুনরায় জাকিরকে মেরে হাসপাতালে পাঠাবে বলে হুমকি দিলে জাকিরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে শেবাচিমে ভর্তি করা হয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী গোলাম রসূল এক হোটেলে ৯ হাজার টাকার মত টাকা বাকি করেছে। মালিক এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিবে গোলাম রসূলকেে এমন কথা জানায় শান্ত। শান্ত ও গোলাম রসূলের মাঝে পূর্বে দ্বন্দ্ব ছিল। এই নিয়ে গোলাম রসূলের সমালোচনা করেন আরিফ। তখন শান্তর সাথে পূর্ব শত্রুতা থাকা জাকিরকে শান্তর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে গোলাম রসূল, এমনটাই মনে করেন অনেকে। এই ঘটনার পরের দিন ফেসবুকে ছবিতে হা হা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে সংঘাত হয়।
আরও পড়ুন: আলোচনায় ইস্ট ডেল্টার ভিসি অ্যাওয়ার্ড, ৪-এ ৪ পেলেন ৮১ শিক্ষার্থী
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রসূল এই মারামারির সাথে জড়িত না থাকার দাবি করে বলেন, আমার কাছে এক দোকানদার কিছু টাকা পাবে। আমি তার নিয়মিত ক্রেতা। টিউশনির টাকা পেলে সেটা পরিষদ করে দেব। এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এসব বিষয়ে কারো সাথে আমার ঝামেলা হয়নি। আমি ভোলা রোড সবজি কিনতে গিয়েছিলাম, আমি দোকানে ছিলাম। তখন দেখি, ওদের মাঝে ঝামেলা হচ্ছে আমি গিয়ে ছাড়িয়ে দেই।
এই ঘটনায় শান্ত ইসলাম আরিফ বলেন, জাকির দীর্ঘদিন যাবত নানাভাবে আমাকে স্লেজিং করে আসছিল। ২৬ তারিখ জাকির পরিকল্পিতভাবে আমার পোস্টে হাহা রিয়্যাক্ট দেয়। আমি মেসেজ দিয়ে জাকিরকে রিয়্যাক্ট রিমুভ করার জন্য অনুরোধ জানাই। কিন্তু জাকির রিয়্যাক্ট রিমুভ না করে আমাকে গালি ও হুমকি দেয়। উসকানি দিয়ে আমার বাসা সংলগ্ন ভোলার রোডে ডেকে নিয়ে যায়। আমার কাছে এসবের স্ক্রিনশট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওরা উদ্দেশ্য নিয়ে আমাকে মারতে আসে। আমার বাসা ভোলার মোড়, আর ওদের বাসা ভোলারোড থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে। ওরা এখানে আসে মারামারি করার জন্য। আমি ভোলারোড যাওয়ার পর অকথ্য ভাষায় আমাকে গালি দেয়। আমি প্রতিত্তোর দিলে দুইজন আমার উপর আতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। গোলাম রসূল আমাকে ধরে রাখে আর জাকির কিল ঘুষি দিয়ে আঘাত করে। আমি একা ছিলাম, আত্মরক্ষার জন্য আমিও হিট করি। তখন জাকির আমায় কামড় দেয়।
শিক্ষার্থী জাকির বলেন, আমি শান্তর একটা ছবিতে ভুলে ‘হা হা’ রিয়্যাক্ট দিয়েছিলাম। ও (শান্ত) আমাকে সেটা রিমুভ করতে বলেছিল।কিন্তু আমার ফোনে এমবি ছিল না। শুরুতে আমি মশকরা করে বলেছিলাম, তুই আমাকে মারবি? পরে আমি কোথায় আছি তা জানতে চায় শান্ত। তখন শান্তকে বলি, ‘আমি ভোলার রোডে আছি।’ তারপর অল্প সময়ের মধ্যে সে চলে আসলে আমি ওরে বন্ধু বলে সম্বোধন করি। কিন্তু শান্ত আমার কথা না শুনে চোখে ঘুষি মারে। ঘুষির আঘাতে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বুকে কিলঘুষি মারে। তখন গোলাম রসূল এসে ছাড়িয়ে দিয়ে আমাকে রক্ষা করে।
তবে হাতে কামড় দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন জাকির। তিনি বলেন, এগুলো সব বানোয়াট, দরকার হলে ফরেনসিক রিপোর্ট করে দেখুন।
ববির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা পম্পা রানী মজুমদার বলেন, ঘটনাটির সাথে সংশ্লিষ্টরা আমাদের শিক্ষার্থী, তাদের সাথে আমার মৌখিকভাবে কথা হয়েছে। আমরা চাই সকল শিক্ষার্থী ভালো থাকুক। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কোনো শিক্ষক বরিশালে নেই। খুব শীঘ্রই আমরা বিষয়টির সমাধান করবো।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ববি প্রক্টর ড. আব্দুল কাইউম বলেন, আমাকে সেদিন রাত ১২টার দিকে এক শিক্ষার্থী ফোন করে বলেছিলেন আমাদের এক শিক্ষার্থী খুব অসুস্থ, অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। সকলে জানতে পারি মারামারি হয়েছিল। আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি।
কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো লিখিত বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে আছে।