১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৪৭

ববিতে আইন ভেঙে ডিন নিয়োগের অভিযোগ রুটিন উপাচার্যের বিরুদ্ধে

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া  © ফাইল ফটো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আইন ভেঙে ডিন নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। গত রবিবার (১১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানভীর কায়ছারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন পদে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। 

জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২২(৫) ধারা অনুযায়ী কোনো অনুষদের ডিনের দায়িত্ব শেষ হলে পরবর্তীতে সেই অনুষদের অন্যকোনো বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ডিন পদে নিয়োগ করতে হবে। পূর্ববর্তী কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মুহসিন উদ্দীন। নতুন করে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানভীর কায়ছারকে ১১ ডিসেম্বরে ডিন নিয়োগ করা হয়। যা আইনের লঙ্ঘন। 

আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন পদে পরবর্তীতে বাংলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক শারমিন আক্তারকে ডিন নিয়োগ দেয়ার করার কথা ছিল। কিন্তু নিয়ম ভেঙে ইংরেজি বিভাগ থেকেই তানভীর কায়ছারকে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ধারা ২২(৫) অনুযায়ী এর পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত বিভাগ বাংলা থেকে ডিন হওয়ার কথা। গত ৮ নভেম্বর উপাচার্য রুটিন দায়িত্ব পওয়ার এক মাস যেতে না যেতেই অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বর্তমানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি-২০২৪ এর কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের মৌসুম চলছে। নতুন নিয়োগকৃত ডিন তানভীর কায়ছার নির্বাচনের একটি প্যানেল থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। এই প্যানেলটি বর্তমান রুটিন উপাচার্য ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার আশীর্বাদপুষ্ট। নির্বাচন নিয়ে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি ও আশীর্বাদপুষ্ট শিক্ষককে সুবিধা প্রদানের নামে রুটিন উপাচার্য বিধি বহির্ভূত এই কাজটি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক শিক্ষকের ভাষ্য, এ নিয়োগটি সংসদ থেকে পাশকৃত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পূর্ণাঙ্গ লঙ্ঘন। এদিকে একই আইন অনুযায়ী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগের পালাক্রমে ডিন নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে। ফলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন নিয়োগের এই প্রক্রিয়াকে অনেকেই নিয়ম বহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়েছেন তারা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

এর আগেও বঙ্গমাতা হলের প্রভোস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও আইন ভাঙার অভিযোগ উঠেছে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। কেননা একজন রুটিন উপাচার্য রুটিন দায়িত্ব মোতাবেক কোনো হলের প্রভোস্ট পদ শূন্য হলে সেখানে হাউজ টিউটরদের মধ্য থেকে সিনিয়রিটির ক্রম অনুসারে কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্টের দায়িত্ব প্রদান করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। তিনি গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেনা রানী বিশ্বাসকে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্টের দায়িত্ব প্রদান করেন। অথচ ড. হেনা রানী বিশ্বাস কখনোই হাউজ টিউটর পর্যন্ত ছিলেন না।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসনে বলেন, নিয়োগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী হয়নি। আইনে ২২ এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পালাক্রমে বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ডিন হবেন, মানে পরবর্তীতে বিভাগ ঘুরে আসলে তখন তিনি দায়িত্ব পাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কোনো ধরনের আইনের লঙ্ঘন হয়নি। কলা ও মানবিক অনুষদের সিনিয়র শিক্ষককে ডিন পদে দেওয়ার কথা। সিনিয়র শিক্ষককে দেওয়া হয়েছে। 

একই বিভাগ থেকে পরপর দুইবার কেন নিয়োগ দেওয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, একই বিভাগ থেকে দেওয়া যাবে না এমন কথা স্পষ্টভাবে লেখা নেই। যেটা লেখা আছে সেটা নিয়ে আমরা শিক্ষকরা বসেছি। একই বিভাগ থেকে দেওয়া যাবে না এরকম লেখা নেই।   

উল্লেখ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.মোঃ ছাদেকুল আরেফিনের মেয়াদ শেষ হয় ৪ নভেম্বর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড.মোঃ বদরুজ্জামান ভূঁইয়াকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৮ নভেম্বর।