ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনে গান-বাজনা জায়েজ, সন্ধ্যার পর নিষিদ্ধ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সন্ধ্যার পর উচ্চশব্দে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের পর পক্ষে-বিপক্ষে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে শুধু সন্ধ্যার পরে নয়, দিনেও গান-বাজনা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। আবার কিছু ব্যবহারকারী কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছেন।
ফেনীর হাফেজ আহাম্মদ মজুমদার জামে মসজিদের খতিব এম আলাউদ্দিন মিয়াজী বলেন, ‘‘আশ্চর্য হলাম, নাম হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ গান-বাজনা নিষিদ্ধের জন্য নোটিশ দিতে হলো! তাও শুধু সন্ধ্যার পরের জন্য। অর্থাৎ দিনে গান বাজনা করলে সমস্যা নাই। লজ্জা এ জাতির জন্য। সন্ধ্যার পর গান-বাজনা নিষিদ্ধ, দিনে জায়েজ।’’
কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরান লিখেছেন, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহে দিনের বেলা উচ্চ শব্দে গান বাজনা নিষিদ্ধ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’’
আজির বিন জামাল নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় স্যাকুলরদের দখলে। যিনা-ব্যভিচার আর অশ্লীলতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। কেয়ামতের অন্যতম একটি লক্ষণ হচ্ছে, কেয়ামতের আগে নামেমাত্র ইসলাম থাকবে। কিন্তু কেউ ঈমানদার থাকবে না। সেরকমি বলা চলে।’’
শিমুল খান নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী এমন সিদ্ধান্তের বিদ্রুপ করে লিখেছেন, ইবিতে সন্ধ্যার পর উচ্চ শব্দে গান-বাজনা নিষিদ্ধ। চলুন ভূত এফএম শুনি।
আরও পড়ুন: ইবির হলে হলে সন্ধ্যার পর উচ্চশব্দে গান-বাজনা নিষিদ্ধ
এর আগে গত মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) আবাসিক হলগুলোতে রাতে উচ্চশব্দে গান বাজানো বন্ধের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষার্থীরা। উচ্চশব্দে মাইক বাজানোর ফলে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছেন না বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন তারা। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তারা।
পরে গত বুধবার (০৬ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি এক সভায় আবাসিক হলগুলোতে সন্ধ্যার পর উচ্চশব্দে গান-বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘শনিবার (০৯ ডিসেম্বর) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।’
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ছিল বিপরীত প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। অমিত হাসান নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘দেশটা আস্তে আস্তে কোথায় যাচ্ছে কে জানে। ছিলাম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখন আস্তে আস্তে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, সেটা কেউ বলতে পারবো না।’’
সব ধরনের উচ্চস্বরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জুলহাস উদ্দিন সেজান নামে একজন ব্যবহারকারী বলছেন, ‘‘উচ্চস্বরে যেকোনো জিনিসই বন্ধ করা উচিৎ। সেটা গান-বাজনা হোক আর সামাজিক-ধর্মীয় যাইহোক। কারণ উচ্চস্বরে কানের ক্ষতি করে, বাচ্চাদের ঘুম ও পড়ার ব্যাঘাত ঘটায়, অসুস্থ মানুষের যন্ত্রণা বাড়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘উচ্চশব্দে গান-বাজনা বন্ধের বিষয়ে কিছু শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে পরদিনই এ বিষয়ে জরুরি সভা হয়। সেখানে উচ্চশব্দে গান-বাজনা বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। যদি কেউ এটি অমান্য করে তাহলে কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’