প্রতিষ্ঠার ১৮ বছরেও নিরাপত্তা সংকটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার দেড় যুগে এসেও এসব প্রত্যাশার অধিকাংশই পূরণ হয়নি। বরং নানা-সংকট ও অপূর্ণতার বেড়াজালে আটকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্রগতি। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল নিরাপত্তাকর্মী ও সীমানা প্রাচীর না থাকায় এ সংকট দিনদিন বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও নতুন স্থাপনার জন্য নতুন করে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ না হওয়ায় এ সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি আবাসিক হল, ৪টি অ্যাকাডেমিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, ৩টি ডর্মেটরি, ১টি গেস্ট হাউস ও নবনির্মিত স্পোর্টস কমপ্লেক্স এর বিপরীতে নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে ৫৩ জন। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ২২ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং ভাড়াকৃত ৩১ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
এদিকে নতুন ভবনগুলোর মধ্যে স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সংগঠনসমূহের কক্ষ, শেখ হাসিনা হল, জিমনেশিয়াম, প্রধান ফটক ও বঙ্গবন্ধু হলের নতুন ভবনে এখনো স্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী দেওয়া হয়নি। ফলে পূর্বের নিয়োগকৃত প্রহরীদের মাধ্যমে শিফট করে বেশি প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হয়। যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা দপ্তর।
সূত্র জানায়, নিরাপত্তাকর্মী সংকটের ফলে আবাসিক হলে, ডরমেটরিতে নিয়মিত নিরাপত্তাকর্মী রাখা সম্ভব হয় না। এছাড়া প্রধান ফটকে, অনুষদ ভবনেও নিরাপত্তাকর্মী দিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও হলে বা অনুষদে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক সময় অফিসিয়াল কাজও করানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন ভবনে দায়িত্ব থাকা আনসার সদস্যরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, দায়িত্ব রেখে অন্যত্রে চলে যাওয়া, এমনকি আবাসিক হলে চুরির অভিযোগও রয়েছে। নিরাপত্তার সংকটে হলগুলোতে বাড়ছে চুরির ঘটনা।
শিক্ষার্থীদের সাইকেল, মোবাইল, ল্যাপটপ, হলের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি চুরির ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই। এমনকি ছেলেদের হলের অভ্যন্তরে নারী শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত প্রবেশের মত ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ক্ষেত্রে হল প্রশাসন নিরাপত্তাকর্মী সংকটকে দায়ী করেন।
আরও পড়ুন: অভিভাবক শূন্য জবি, কে হচ্ছেন পরবর্তী উপাচার্য
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী রেদোয়ান তানজিম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের হলের ২২২ নম্বর রুম থেকে আমার মোবাইলসহ দুইটি মোবাইল চুরি হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে হল থেকে মোবাইল, ল্যাপটপসহ হলের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। দেখা যায় অনেক সময় হলের ভিতরে বহিরাগতরা চলাচল করছে, যা খুবই অনিরাপদ। আর হলে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীরা অধিকাংশ সময় মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। এখানে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। অনেক সময় অনুষদ ও হলের গেইটে সিকিউরিটি গার্ডদের পাওয়া যায় না। যার কারণে নানা সময়ে ভবনের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। এখানে সিকিউরিটি গার্ড যেমন প্রয়োজন তেমনি তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করাও প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আনসার কমান্ডার মফিজ উদ্দিন বলেন, অল্প সংখ্যক আনসার দিয়ে সুষ্ঠুভাবে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, আরও ২০/২৫ জন আনসার প্রয়োজন। আনসার সংকট ব্যাপারে আমরা নিরাপত্তা দপ্তরকে অবগত করেছি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, সবমিলে আমাদের ৫৩ জন নিরাপত্তা প্রহরী আছে। এত অল্প সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে আমরা সকল স্থানের নিরাপত্তা দিতে পারছি না, ফলে কিছু শিফট ফাঁকা রেখে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিকিউরিটি দিতে হচ্ছে। আমাদের বর্তমানে ২০ জন নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন। নিরাপত্তা কর্মীর জন্য প্রশাসন বরাবর লিখিত দিয়েছি, কিন্তু এখনো পাই নাই।
প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, সংকটের ব্যাপারে নিরাপত্তা শাখা থেকে একটি রিকিউজেশন দেওয়া হয়েছে। ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ চেয়ে ইউজিসিতে একটা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগগুলো পেলে এই সংকট দূর হবে।
সার্বিক বিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, সব কিছু প্রসেসিং আছে, সংকট দূর হয়ে যাবে।