বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হলে ছাত্রলীগের হামলা, ১৫ শিক্ষার্থী আহত
বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র হলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এসময় তাদের সঙ্গে বহিরাগতারাও ছিল বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদরে। সোমবার রাত ৮টায় সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নে দুর্গাপুর এলাকায় কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল।
আহত শিক্ষার্থীদের দাবি, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সমর্থনে মিছিলে অংশ না নেওয়ায় হামলা করা হয়েছে। তবে অপর পক্ষের দাবি, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে হামলার চেষ্টাকালে তাদের প্রতিহত করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বুধবার থেকে কলেজ শিক্ষার্থীরা অভ্যন্তরীণ আন্দোলন করে আসছেন। সোমবার কলেজের ইলেক্ট্রনিক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব ভুইয়া, বেল্লাল, শাহরিয়ার তানভীরসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা বলে। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কলেজ অধ্যক্ষের কাছে নিরাপত্তা চায় শিক্ষার্থীরা।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বহিরাগত মুখোশধারীরা ক্যাম্পাসের হলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বেধরক মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর।
আরও পড়ুন: জালিয়াতির অভিযোগে আন্তর্জাতিক জার্নাল থেকে ৫ অধ্যাপকের গবেষণা প্রত্যাহার
গুরুতর আহতরা হলেন- তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক শাহরিয়ার ২৪, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী স্বপ্নীল এবং আশিকুজ্জামান সজীব। আহতদের মধ্যে অন্যান্যরা হলেন- ইলেক্ট্রনিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব, সিভিল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আয়নান চোধুরী, ত্রিপলি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইমরান, তৃতীয় বর্ষের মো. রকিব ও অলিফ ইভনে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরে গেছে।
জানা গেছে, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ। এর মধ্যে একটি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং অপরটি বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর। এই দুই গ্রুপের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল।
তবে অভিযুক্তদের মধ্যে নেতৃত্বদানকারী সাকিব ভুঁইয়ার দাবি, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ম্যুরাল ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। ভাঙচুরে বাধা দিতে গিয়ে দুপক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে।
হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, হামলার সময় ও পরে তাঁরা কলেজ অধ্যক্ষের সহায়তা চেয়ে পাননি। এছাড়া এসময় পুলিশের ভূমিকাও ছিল নিষ্ক্রিয়।
কলেজের অধ্যক্ষ এম কে খলিল উদ্দীন বলেন, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মামলা করা হবে দাবি করে তিনি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে অনুরোধ জানান।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্রদের কোটা সংস্কার নিয়ে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ক্যাম্পাসে হাতাহাতিও হয়েছে। এর জেরে নিজেদের মধ্যেই মারামারি হয়। এখন পর্যন্ত তিনজন আহত হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রীর কর্মসূচিতে না যাওয়ায় ছাত্রদের উপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এই ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করেনি। আহতদের বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।