লালফিতার দৌরাত্ম্যে ইবি প্রশাসনে কচ্ছপ গতি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন দফতর ও বিভাগসমূহের বিভিন্ন কাজে প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয়। এজন্য অনুমতি চেয়ে ফাইল প্রশাসন বরাবর জমা দিতে হয়। এ ফাইল যেন চলে কচ্ছপ গতিতে। আবার ফাইল হারিয়ে ফেলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের গাফিলতির ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
এতে ক্ষুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর দফতর প্রধানসহ অন্যান্য অফিস প্রধানরা। বারবার অভিযোগ করলেও উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ঢালাও অভিযোগ দেখতে চান না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।
যদি কেউ এরকম সমস্যা ফেস করে তাহলে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাতে হবে। তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুবিধা হবে। -উপাচার্য
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো কাজ অনুমোদনের জন্য প্রশাসন বরাবর ফাইল জমা দিতে হয়। ফাইল অনুমোদন হতে সময় লাগে ৫-৬ মাস। আবার অনেক ফাইল হারিয়ে ফেলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। পুনরায় নতুন করে ফাইল জমা দিতে হয়। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন তারা।
এছাড়া ফাইল অনুমোদন হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সিন্ডিকেট কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের সম্মতিতে ফাইলগুলো স্বাক্ষর হয়।
দফতর প্রধানরা বলছে, আমরা সময়মতো ফাইল জমা দেই। অনুমোদন করতে ঘাম ঝরে যায়। এছাড়া ফাইল জমা দেওয়ার পরে কয়েকদিন পর খোঁজ নিতে গেলে তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। একটি কাজের ফাইল অনুমোদনের জন্য একই ফাইল ৩-৪ বার দেওয়া লাগে। সময়মতো কাজ না হওয়ার কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ও পিছিয়ে যাচ্ছে।
কয়েকজন বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভাগের নানা কাজে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরীক্ষা বা রিটেক পরীক্ষাসহ বিভাগের অন্যান্য কাজে প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন হয়। অনুমতি নিতে ফাইল জমা দেন তারা। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মতারা ঠিকমতো কাজ করেন না। ফলে ফাইল অনুমোদন হতে দেরি হয়। ফলে বিভাগের বিভিন্ন কাজ পিছিয়ে যায়।
সম্প্রতি গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক মিলন কুমার ঘোষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সেমিনারে অংশ নিতে ৪-৭ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটির ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। সেই ছুটির অনুমোদন হয় আবেদনে উল্লেখিত নির্ধারিত তারিখের ২০ দিন পর। পরবর্তীতে তিনি ছুটি অনর্থক দাবি করে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মিলন কুমার ঘোষ বলেন, ছুটিটা আমার লাগবে না। এজন্য বাতিলের জন্য আবেদন করেছি।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে লোকবল সংকট চরমে। অন্য অফিসের কর্মকর্তাদের দিয়ে সংকীর্ণ অফিসে কার্যক্রম চলছে। লোকবল নিয়োগের চাহিদা দিয়ে কয়েক মাস আগে ফাইল পাঠালেও এখনও সুরাহ হয়নি। সম্প্রতি কম্পিউটার অপারেটরের একটি পদে নিয়োগের কার্যক্রম চলমান। তবে এখনও প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। দফরটিতে সনদপত্র ও নম্বরপত্র উত্তোলনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের পরিচালক একে আজাদ লাভলু বলেন, বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা রয়েছে। আমরা চাহিদাও দিয়েছিলাম। কিন্তু একটি পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লোকবল সংকটে শিক্ষার্থীদের ভালো সেবাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, আমি যথাসম্ভব ফাইল ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার এখান থেকে ফাইল অনুমোদন হয়ে অন্য কোথাও পড়ে থাকলে তো আমি জানতে পারব না। এজন্য সকলকে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো কাজ অনুমোদনের জন্য প্রশাসন বরাবর ফাইল জমা দিতে হয়। ফাইল অনুমোদন হতে সময় লাগে ৫-৬ মাস। আবার অনেক ফাইল হারিয়ে ফেলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
ফরেন সেলের পরিচাল অধ্যাপক ড. মোস্তফা জামাল হ্যাপি বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ফরেন সেল নামে একটা অফিস আছে। শুধু নামেই আছে, এর জন্য খাতা কলমে কোন অফিস নেই। এখনও কোন লোকবল ও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বারবার কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যদি কেউ এরকম সমস্যা ফেস করে তাহলে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাতে হবে। তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুবিধা হবে।