চলতি বছরই একক ভর্তি পরীক্ষা, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ শিগগিরই
চলতি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করার বিষয়ে দ্রুত একটি অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করা হয়েছে। দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশ জারি হলে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ভর্তি পরীক্ষায় আসা বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কমিশনকে দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করে।
আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক সভায় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে ইউজিসি কর্তৃক গঠিত কমিটির সভা শেষে এ সুপারিশ জানানো হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়।
আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠনের আগ পর্যন্ত এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যাই থাকুক না কেন; এই অধ্যাদেশ তার উপরে প্রাধান্য পাবে। কমিশনের একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটিকে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একক ভর্তির বিষয়টি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে পারলে তা সবার জন্যই ভালো হবে এবং শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হবে—প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।
নতুন এ সুপারিশের ফলে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীরা একক একটি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে পারবেন। তবে এ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে অধ্যাদেশ জারির পর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করবে দেশের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তুত করবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এটি আগামী একমাসের মধ্যেই সম্পন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর তা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে অধ্যাদেশ (প্রেসিডেন্ট অর্ডার) আকারে জারি করা হবে।
সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, এদিন একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং যেহেতু মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্যের এ নিয়ে অভিপ্রায় আছে, সেহেতু কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এর বাইরে থাকার সুযোগ থাকবে না। ফলে দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে মানা হবে একক ভর্তি পরীক্ষা।
সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর আলমগীর বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাঁর অভিপ্রায় অনুযায়ী জনস্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে যে আদেশ জারি করা হয়েছে সেটি বাস্তবায়নে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষকদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের অভিপ্রায়ের বা আদেশের বাইরে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে আদেশ জারির পর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করবে দেশের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তুত করবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এটি আগামী একমাসের মধ্যেই সম্পন্ন হতে পারে।
সভায় উপস্থিত সদস্যরা একক ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সদিচ্ছা। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন যা বাস্তবায়নে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নেতৃত্ব দিতে পারে।
একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম জানান, এতে কোনো সন্দেহ নেই, একক ভর্তির বিষয়টি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে পারলে তা সবার জন্যই ভালো হবে এবং শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাগব হবে। সেজন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক ভাবে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন এই উপাচার্য।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিন ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাকসুদ কামাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নূরুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. কামালউদ্দিন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উপ-উপাচার্য ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন এবং ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান।