ফি দিয়েও নিম্নমানের ইন্টারনেট সেবা, ডাটা কিনতে হয় শিক্ষার্থীদের
প্রশাসন ইন্টারনেট ফি বাবদ নির্দিষ্ট সময়ে টাকা বুঝে নিলেও নিম্নমানের ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রকল্পে ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট সুবিধা সরবরাহ করা হলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নাজুক ইন্টারনেটের গতি সত্ত্বেও সপ্তাহে একদিন একাডেমিক কার্যক্রম অনলাইনে নেওয়ার ঘোষণায় বিপদে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও ইন্টারনেট সুবিধা দিচ্ছে বিডিরেন (বাংলাদেশ রিসার্চ এন্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক)। ইউজিসি পরিচালিত উচ্চশিক্ষার মানবর্ধক একটি প্রকল্পের আওতায় এ সুবিধা পাচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের যথাক্রমে ৩০০ ও ১০০ টাকা হারে ইন্টারনেট ফি দিতে হয়।
অন্যদিকে, সর্বশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত আগস্ট থেকে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনলাইনে নেওয়ার ঘোষণা এসেছে। এখন প্রতি মঙ্গলবার সব ক্লাস-পরীক্ষায় অনলাইনে অংশ নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু কম গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা এবং বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হলের বাইরে থাকায় অনলাইন কার্যক্রমে অংশ নিতে সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে অর্থ খরচ করে কিনতে হচ্ছে ইন্টারনেট ডাটা প্যাক।
ইউজিসি পরিচালিত উচ্চশিক্ষার মানবর্ধক একটি প্রকল্পের আওতায় ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের যথাক্রমে ৩০০ ও ১০০ টাকা হারে ইন্টারনেট ফি দিতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ইন্টারনেট সুবিধা সরবরাহ করা হচ্ছে তা অপ্রতুল উল্লেখ করে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিয়ান নাকিব বলেন, হলে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে বাজে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বারবার ডিভাইসের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নেটের স্পিডও খুবই স্লো। এমনকি সাধারণ ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রেও বাফারিং ও লোডিং হতে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেরে বাংলা হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, হলের ইন্টারনেট সুবিধা তো ভুতূড়ে। এই আছে এই নেই। রুমে আমরা রাউটার কিনে দিলে হল কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট সুবিধা দেয়। কিন্তু রাউটার দিলেও পর্যাপ্ত গতি পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় সংযোগও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বাইরে থেকে আমরা টাকা দিয়ে ইন্টারনেট সুবিধা নিলে ঠিকমতো ইন্টারনেট পাওয়া যায়। এমন কেন হবে?
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইরাজ রব্বানী বলেন, আমাদের কোর্স ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ, এসাইনমেন্ট জমা দেয়াসহ ক্লাস-পরীক্ষার বাইরের অনেক কাজের জন্য ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হতে হয়। শুনেছি ইউজিসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হয়। তারপরও পকেটের টাকা খরচ করেই ইন্টারনেটের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।
আরো পড়ুন: ‘বুদ্ধিমান উপলব্ধি ভিত্তিক প্রকল্প’ উপস্থাপন করে বিজয়ী হলো তিন দল
ইন্টারনেট সুবিধার অপ্রতুলতার কথা কিছুটা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এসুরেন্স দপ্তরের পরিচালক ড. মুহসিন উদ্দিন বলেন, হলে ইন্টারনেট নিয়ে অসুবিধার কথা অনানুষ্ঠানিকভাবে কয়েকজন আমাকে জানালেও এ বিষয়ে লিখিত কেউ কিছু দেয়নি। এখন যেহেতু জানলাম, ইন্টারনেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আছে- দ্রুতই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইন্টারনেটের কম গতির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেটওয়ার্কিং ও আইটি দপ্তরের পরিচালক রাহাত হোসেন ফয়সাল বলেন, ইন্টারনেটের কম গতির কোন প্রশ্নই আসে না। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি, হলের রিডিং রুমে যথেষ্ট গতি থাকে। তবে শিক্ষার্থীদের থাকার রুমগুলোতে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে রাউটার ব্যবহারের পরামর্শ দেন এ শিক্ষক।
ইউজিসি কর্তৃক ইন্টারনেট সুবিধা সরবরাহ করা হলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিডিরেনের ইন্টারনেট সুবিধা নিতে গেলেও আমাদের অর্থ খরচ করতে হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ অনেক খরচও আছে। যেগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নিতে হচ্ছে।