আচরণ শেখানোর নামে হয়রানি, হাসপাতালে ছাত্রী
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) সিনিয়রদের দ্বারা এক ছাত্রীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম শিমু রাণী তালুকদার। তিনি ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তবে রি-এডমিশন নিয়ে বর্তমানে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাথে ক্লাস করছেন বলে জানা যায়।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি মেসে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
র্যাগিংয়ের শিকার হওয়ার পর ছাত্রীকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রোববার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর ঐ ছাত্রীকে তার বন্ধুরা মেসে নিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কয়েকজন বন্ধু জানান, শনিবার রাত আটটার সময় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী রুকাইয়া, সাদিয়া পারভিন সোমা, তাসলিমা, গুলনাহার, সুমাইয়া, সাকিলা, সুমাইয়া, লোকপ্রশাসন বিভাগের সায়েদা সুলতানা শাওন, ইংরেজি বিভাগের ইসরাত জাহান ইমু সহ মেসের কয়েকজন ইমিডিয়েট সিনিয়র তাকে মেসের ছাদে ডেকে নিয়ে যান। তখন এই সিনিয়ররা ম্যানার শেখানোর নামে মানসিকভাবে হেনস্তা করেন। এভাবে রাত এগারোটা পর্যন্ত চলার পর, শিমু অসুস্থ হয়ে যায়। তারপর সিনিয়ররা এম্বুলেন্স ডেকে, তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিমু রাণী তালুকদার বলেন, আমি অনেকদিন থেকে অসুস্থ। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে সিনিয়র আপুরা বিভিন্নভাবে আমার দোষ ধরে যাচ্ছেন। আমার ব্যবহার ভালোনা, সালাম দেই না, সম্মান করিনা এভাবে নানা বিষয়ে দোষ ধরতে থাকেন। গতকাল রাতে সিনিয়ররা আমাকে মেসের ছাদে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে আমাকে ম্যানার শেখানোর নামে বকাঝকা করতে থাকেন। এরপর আমার শরীর খারাপ লাগলে আমি ওয়াশরুমে যাই কিন্তু উনারা আমাকে ওয়াশরুমে থেকে আবার ছাদে নিয়ে যায়। তখন আমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ি। একপযায় উনারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমি ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। রি-অ্যাডমিশন দেওয়ার কারণে আমি পুনরায় ১৫ তম ব্যাচের সাথে ক্লাস করছি। সেক্ষেত্রে যারা আমাকে র্যাগ দিয়েছে, তারা আমাকে ম্যানার শেখানোর নামে কোন দুর্ব্যবহার করতে পারে না। এ বিষয়টি জানার পরও তারা আমার সাথে কয়েকদিন ধরে দুর্ব্যবহার করছেন।
তবে ঐ শিক্ষার্থীকে হেনস্তার বিষয়টি অস্বীকার করেন সিনিয়ররা। পরিসংখ্যান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুকাইয়া ইসলাম বলেন, তাকে কোনোরকম মানসিকভাবে কোন হেনস্তা করা হয়নি। আমরা শুধুমাত্র মেসের নিয়মকানুন জানানোর জন্য সব জুনিয়রকে ডেকেছিলাম। শিমুর অসুস্থতার ব্যাপারে আমরা জানতাম না।
এই বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাবিবুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আমি ওই শিক্ষার্থীর অসুস্থতার বিষয়ে শুনে, সাথে সাথেই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু র্যাগিংয়ের ব্যাপারে শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে কিছু জানায়নি।
এ ব্যাপারে কথা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি এ ব্যাপারে অবগত নই। আর কোনো অভিযোগও পাইনি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাদের কাছে অভিযোগ করলে এ্যান্টি র্যাগিংয় কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।