এডিসি হারুনের বিচার চায় দুই চোখ হারানো ছাত্রলীগ কর্মী মোশারফ
২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের শুরু হয়। বর্তমান সময়ে সমালোচিত ও সদ্য রমনা জোনের এডিসি হারুন-অর-রশীদ সেই সংঘর্ষের সময় পুলিশ সদস্যদের সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দেন৷ এসময় এক পুলিশ সদস্য গুলি শেষ হয়ে গেছে বললে তাকে চড় মারেন এডিসি হারুন৷ পরবর্তীতে যার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়৷ সেই ঘটনায় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে গুরুতর আহত হন ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এবং ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী মোশারফ হাজারী৷ তার চোখে রাবার বুলেট লাগার পর আর চোখের আলো ফিরে পাননি এই ছাত্র৷
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের পরে ফের আলোচনায় আসেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ। ২০২২ সালের ওই ঘটনায় দুই চোখ হারানো মোশারফ হাজারীর আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, আমি ঢাকা কলেজের হলে থাকতাম৷ ছাত্রলীগের সক্রিয় এবং রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম৷ ওই সময় বলা হল আমাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে আর চিকিৎসার সমস্ত খরচ সরকার থেকে বহন করা হবে৷ আমি মাত্র এক লাখ টাকা পেয়েছি সরকার থেকে৷ আমার দুই চোখই অন্ধ৷ মাথায় ৩০-৩৫টি ছররা গুলি এখনও আছে৷ এগুলো আর বের করা সম্ভব না৷ আমাকে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে৷
নিজের পরিবারের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েও কোন লাভ হয়নি জানিয়ে মোশারফ বলেন, পরিবারের জমি বিক্রি করে আমি উন্নত চিকিৎসার জন্য দুইবার ভারতে গিয়েছি। এতেও কোন লাভ হয়নি৷ চোখে আলো দেখার আশা ছেড়ে দিয়েছি৷ বাবার একটা ছোট-খাটো দোকান ছিলো সেটার ব্যবসাও এখন ভালো না৷ আমি এখন অসহয়৷ আমাকে দেখার মত কেউ নেই৷ এখন সারাদিন বাড়িতেই বসে থাকি৷ যেহেতু চোখে দেখি না তাই কোন কাজও করতে পারি না৷ বাড়ির ছোট বাচ্চা (ভাতিজি-ভাতিজা) আছে তাদের সাথেই বসে সময় কাটে ৷
মোশারফ বলেন, আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগেই এই ঘটনা ঘটলো৷ আমি সুস্থ থাকলে আজ হয়ত চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতাম৷ সেই সুযোগও আর নেই৷ আমি নিজেই তো অসহায়৷ সরকার আমাকে কোন কর্মের ব্যবস্থা করলে আমি উপকৃত হতাম৷
সম্প্রতি রমনা জোনের এডিসি হারুনের কথা জিজ্ঞেস করলে মোশারফ বলেন, ঘটনার পর জানতে পারি এডিসি হারুনের নির্দেশে আমাদের ওপর গুলি করা হয়৷ আমি কার কাছে বিচার চাইবো৷ পুলিশ তো সরকারি বাহিনী৷ তাদের বিরুদ্ধে তো থানায় জিডিও করতে পারবো না ৷ এসব ঘটনার বিচার হওয়া দরকার৷
তবে এমন ঘটনার কোন পদক্ষেপ বা আইনি উদ্যোগ নেয়নি কলেজ প্রশাসন। এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, সরকারি আর্থিক সহয়তা প্রাপ্তির বিষয়টি একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার৷ প্রধানমন্ত্রীর কল্যান ট্রাস্ট থেকে কিছু আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে৷ মানবিক কারণে তার আরও সাহায্য প্রয়োজন৷ তবে বাকি প্রক্রিয়া কি অবস্থায় আছে আমার জানা নেই৷
তবে সেসময় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট ডিসি, এডিসি, ও নিউমার্কেট থানার ওসির প্রত্যাহারসহ দশ দফা দাবি জানিয়েছিলো ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম. নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি হারুন-অর-রশিদ ও নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স.ম. কাইয়ুম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করেই ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।