তিন মাসেও শেষ হয়নি ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, হাজার আসন ফাঁকা
ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেছে আগেই। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই এখনো ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের পাঠদান শুরু করতে পারেনি। হাতেগোনা কয়েকটিতে নবীন বরণের পর শ্রেণি পাঠদান শুরু হলেও এখনো এ কার্যক্রমের বাইরে থেকে গেছে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো অন্তত এক হাজার আসন ফাঁকা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বছরের মাঝামাঝিতে গুচ্ছভুক্ত সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০ মে মানবিক বিভাগের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্যদিয়ে এবারের এই ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। ২৭ মে ‘সি’ (বাণিজ্য) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ৩ জুন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষার প্রায় তিন মাস গড়ালেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ক্লাস শুরু করতে পারেনি। ইতিমধ্যে হাতেগোনা দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করলেও একইসঙ্গে চালিয়ে নিচ্ছে ভর্তি কার্যক্রম। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত ক্লাস শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি। আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো প্রায় ১ হাজার আসনের মতো ফাঁকা রয়েছে। তাই তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কবে নাগাদ শ্রেণি পাঠদান শুরু হতে পারে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম বর্ষের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর তারিখ ঘোষণা করেছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই তারিখে ক্লাস শুরুর কথা রয়েছে। আগামী ২ ও ৫ সেপ্টেম্বর নতুন সেশনের ক্লাস শুরু করবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া চলতি মাসেই এ সেশনের ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছে গুচ্ছভুক্ত কয়েকটি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০ ও ৩১ আগস্ট যথাক্রমে নতুন শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি মাসেই শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ আগস্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
২২ আগস্ট হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নবীনদের বরণ করে নিয়েছে। পরবর্তীতে বিভাগসমূহ নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লাস শুরু করে। ২৩ আগস্ট নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে ২৬ আগস্ট থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২৭ আগস্ট নবীনদের বরণ করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি।
আরো পড়ুন: দেশে ভর্তিযুদ্ধে সফল না হওয়া রিফাত এখন পড়ছেন স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে
নবীনবরণ অনুষ্ঠান এবং ক্লাস শুরু করলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জানা গেছে, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ফাঁকা আসনে নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ সোমবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। তবে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে এখনো জানে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ভ্রাহ্ম বলেছেন, শিগগিরই ক্লাস শুরু করা হবে। তবে কবে ক্লাস শুরু হতে পারে এই ব্যাপারে তিনি অবগত নন।
ক্লাস শুরুর বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমানও।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হতে আরও সময় লাগতে পারে। ২৭ সেপ্টেম্বর নবীনদের বরণ করে নেওয়ার কথা জানিয়েছে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ফাঁকা আসনে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ওরিয়েন্টেশনের পর বিভাগসমূহ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের মতো করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শুভ্র চন্দন।
কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে নতুন সেশনের প্রথম বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তবে এ বিষয়ে এখনো অফিসিয়াল কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে নিজেদের মতো করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে দিতে পারেন। আমরা আগামী মাসের শুরুর দিক পর্যন্ত দেখব, আসন কেমন ফাঁকা থাকে।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কবে থেকে নতুন বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মেজর মো. আবদুল হাইসহ (অব.) জানিয়েছেন, এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এটি শেষ না হলে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে স্পষ্ট বলা যাচ্ছে না। কবে থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু যায়, ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলে আমরা তা বলতে পারব।
গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাছিম আখতার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে নিজেদের মতো করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে দিতে পারেন। আসন কেমন ফাঁকা থাকে, তা আমরা আগামী মাসের শুরুর দিকে দেখব।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করার পক্ষে নন অধ্যাপক নাছিম আখতার। তিনি বলেন, আমাদের উচিত এসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ না করা। তবে কতদিন এ ভর্তি চলতে থাকবে, তা কমিটির পরবর্তী মিটিং ছাড়া বলা যাবে না। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় এক হাজার আসনের মতো ফাঁকা রয়েছে। তাই তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কবে নাগাদ শ্রেণি পাঠদান শুরু হতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।