নজরুলের ছোঁয়া ও জীবন্ত স্মৃতিতে যে বিশ্ববিদ্যালয়
আজ ১২ ভাদ্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয়।
কবি গত হবার তিন দশক পর ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নামাপাড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯১৪-১৫ সালে কবি নজরুল তাঁর বৈচিত্র্যময় জীবনের একটি বছর কাটিয়েছেন ত্রিশালের এই নামাপাড়ায়। এখানে তিনি যে বটগাছের নিচে বাঁশি বাজাতেন, সেই বটগাছের পাশেই শুকনি বিলের মাঝে স্থাপন করা হয় কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ময়মনসিংহ শহর থেকে ঢাকা অভিমুখে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।
শুধু নামে নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ই যেন কবি নজরুলের ছোঁয়ায় ও স্মৃতিতে জীবন্ত। কবি নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের নাম ও স্মৃতি ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা, ম্যুরাল ও কর্মযজ্ঞে। উপাচার্যের বাসভবনের নাম ‘দুখু মিয়া’ বাংলো, যেটি কবির ডাকনাম। বাংলোটির ফটকে একটি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে রয়েছে কবি নজরুলের ম্যুরাল।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কবি নজরুলের দৃষ্টিনন্দন একটি ভাস্কর্য। শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের নাম ‘চির উন্নত মম শির’, যেটি কবির বিদ্রোহী কবিতার একটি লাইন। ছাত্র-ছাত্রীদের চারটি হলের মধ্যে দুটি হল কবি নজরুলের কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ ও ‘দোলনচাঁপা’ নামে।
ক্যাম্পাস থেকে ভালুকা ও ময়মনসিংহগামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসগুলোর নামেও নজরুলের সাহিত্যকর্মের নামের সাথে মিল রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করে বিদ্রোহী, ধুমকেতু, ঝিঙেফুল, প্রভাতী, বাঁধনহারা, বিদ্যাপতি, প্রলয় শিখা, দক্ষিণ হাওয়া, সওগাত, সাম্যবাদী প্রভৃতি নামের বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের নাম কবির গল্পগ্রন্থের নামে ‘ব্যাথার দান মেডিকেল সেন্টার’। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার নাম কবির কাব্যগ্রন্থ এর নামে ‘চক্রবাক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ‘গাহি সাম্যের গান মুক্তমঞ্চ’, ‘চুরুলিয়া মঞ্চ’ ও ‘জয়ধ্বনি মঞ্চে।’ ‘গাহি সাম্যের গান’ ও ‘জয়ধ্বনি’ শব্দ দুটি চয়ন করা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচলিত বৃত্তিগুলোর নামকরণও করা হয়েছে কবি পরিবারের সদস্যদের নামানুসারে, যেমন- ‘প্রমিলা বৃত্তি’, ‘বুলবুল বৃত্তি’, ‘কাজী অনিরুদ্ধ বৃত্তি।’
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ২৪টি বিভাগে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখানে আইন, নাট্যকলা, চারুকলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সাহিত্যের পাশাপাশি বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন ও সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ার সুযোগ পান। তবে শিক্ষার্থীরা যে বিভাগেই পড়ুক, নজরুলকে জানার স্বার্থে প্রতিটি বিভাগেই ‘নজরুল স্টাডিজ’ নামে একশত নম্বরের বাধ্যতামূলক একটি কোর্স পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে নজরুলের বইয়ের জন্য আলাদা কর্নার, রয়েছে নজরুলের গল্প, উপন্যাস, জীবনীসহ বিপুল বইয়ের ভাণ্ডার।
এছাড়াও নজরুলের সাহিত্যকর্মের উপর উচ্চতর গবেষণার জন্য রয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ’। জাতীয় কবির বিভিন্ন গান, কবিতা, উপন্যাস, নাটক সর্বোপরি তার জীবনী এবং জীবনকর্মের ওপর গবেষণা চলমান রাখার জন্য বিভিন্ন শাখায় পিএইচডি এবং এমফিল প্রোগ্রাম চালু রয়েছে।
এবছর কবির ৪৭ তম প্রয়াণ দিবসে দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোমবার (২৮ আগস্ট) সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক রেজা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সংগীত পরিবেশনা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হবে।