জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের ভিডিওটি র্যাগিংয়ের নয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভাগীয় একটি ক্লাসরুমে সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়র শিক্ষার্থীদের র্যাগিং দেওয়া হচ্ছে-শীর্ষক একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিভাগটির ছাত্রলীগের শীর্ষ এক নেতা।
তবে বিভাগটির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস নিশ্চিত হয়েছে, ক্লাসরুমের সেই ভিডিওটি র্যাগিংয়ের নয়। মূলত অভিনয় করার উদ্দেশ্যে এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল। তাছাড়া ভিডিওটিতে সবাইকে হাসসোজ্বল দেখা যাচ্ছিল। বছরের শুরুর দিকে এ ঘটনাটি ঘটলেও সম্প্রতি সেটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং’ (কটূক্তি, হেনস্তা বা অপমান করা) ও ‘র্যাগিং’ (হুমকি, গালাগাল, নিপীড়ন) রোধে সরকারের করা নীতিমালার বিষয়টি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তিন মাসের মধ্যে জানানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি শিক্ষাসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই নীতিমালা অনুসারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে র্যাগিং ও বুলিংয়ে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন/বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্যরা বুলিং ও র্যাগিংয়ে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্ট বিধি ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনে অনুসারে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এরইমধ্যে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ৫ ছাত্রীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
জানা যায়, ঘটনাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একটি ক্লাসরুমে। ঘটনার সময় বিভাগের ১৬ ও ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিভাগের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিউল সৈকতও উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করছেন অনেকেই।
তবে র্যাগিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে জবির গণিত বিভাগের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিউল সৈকত বলেন, আমি এই ঘটনার কিছুই জানি না৷ এই সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না।
আরেক শিক্ষার্থী রাফাতুল ইসলাম বলেন, ১৬ ব্যাচের সাথে আমাদের পরিচয় পর্ব শেষে আমি, রামিম আর ইব্রাহিম চারজন মিলে শোলে সিনেমার একটা সিন (দৃশ্য) নিয়ে অভিনয় করি ক্লাসের সবার সামনে৷ অভিনয় করার সময় আমরা সবাই হাসসোজ্বল ছিলাম। এখানে র্যাগ দেওয়ার কোন ঘটনায় ছিলনা। অভিনয় শেষে ১৬ ব্যাচের ভাইরা আমাদেরকে একসাথে নিয়ে নাস্তা করেন। ঘটনা এতটুকুই ছিলো।
১৭তম ব্যাচের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ (সিআর) তাবেয়া বলেন, ভিডিও ঘটনাটি এ বছরের শুরুর দিকের। সেখানে আমিও ছিলাম। তবে ওই সময় র্যাগিংয়ের কোনো কিছু ঘটেনি। কিন্তু এতোদিন পর কে বা কারা এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে দিয়েছে তা বোধগাম্য নয়।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো: শরিফুল আলম বলেন, এটা ভুল তথ্য হতে পারে। আমার জানা মতে, আমাদের ডিপার্টমেন্টে কোন ধরনের র্যাগিং নেই।