ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ ৫ শিক্ষার্থীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আজ রবিবার (২০ আগস্ট)। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রক্টর বলেন, বিকাল ৪ টায় মিটিং ডাকা হয়েছে। কেমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিটিংয়ে সবার মতামত গ্রহণ করা হবে। তারপর একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও কিছু বলা সম্ভব নয়।
তবে প্রশাসনের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আজ তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসক ড. আনিসুর রহমান বলেন, উপাচার্যের নির্দেশনানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে। আদালতের আদেশ মেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ম শেখ হাসিনা হলের গণরুমে শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
তারা হলেন, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মুয়াবিয়া জাহান।
তাদের মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও অন্যরা সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত। এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠে। ওই সময় ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
ঘটনা তুলে ধরে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট গ্রহণ করে এ বিষয়ে ওই আইনজীবীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চান। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। মোট তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। যার দুটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও একটি কমিটি গঠিত হয় হাইকোর্টের নিদের্শনা অনুযায়ী।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য হাইকোর্ট ১ মার্চ নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা মেনে পাঁচ শিক্ষার্থীকে ১৫ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি ও হাইকোর্র্টের গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর পার্ট-২ ধারা-৮ মোতাবেক ১২ মাসের জন্য তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি। এ শাস্তি চলাকালীন তারা ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
বিষয়টি পুনরায় আদালতের দৃষ্টিতে আনেন রিটাকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। তিনি আদালতকে জানান যে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি লঙ্ঘন করে পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।
আদালতকে আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি নয়, বরং কোনো অপরাধের জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিতে পারেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ফলে এই শাস্তির বৈধতা যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তবে তা বাতিল হয়ে যাবে।
এরপর হাইকোর্ট নির্যাতনের দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে কোন পদ্ধতিতে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে চান হাইকোর্ট।