০২ আগস্ট ২০২৩, ১৫:৩৪

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস যেন সাপের স্বর্গরাজ্য

শেখ হাসিনা হলের ওয়াশরুমে সাপের আনাগোনা  © টিডিসি ছবি

সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ক্যাম্পাসে সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। ক্যাম্পাস ছাড়াও প্রতিনিয়তই বিভিন্ন আবাসিক হলে আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে নানান প্রজাতির সাপে। সাপের উপদ্রব বাড়ার পেছনে লতাপাতায় আচ্ছাদিত হয়ে ক্যাম্পাস জঙ্গলে পরিণত হওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সর্বশেষ আজ বুধবার (২ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের এক ছাত্রী ফজরের নামাজের জন্য ওযু করতে ওয়াশরুমে গিয়ে সাপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এর আগেও শেখ হাসিনা হলের ১০০৩ নম্বর কক্ষে সাপ পাওয়া গিয়েছিল। এক সপ্তাহ আগে শেরে বাংলা হলের ৩য় তলায় পাওয়া যায় বিষধর সাপ। বঙ্গবন্ধু হলের ৫ম তলার ওয়াশরুমে এবং হলের নিচেও সাপ পাওয়া গিয়েছিল। 

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসের টিএসসির পিছনে রাস্তার পাশে, হলের গেস্টরুমে হলের সামনে থেকে অনেকবার সাপ মারা হয়েছে। একাডেমিক ভবনের আশপাশেও দেখা যায় সাপের আনাগোনা। এতকিছুর পরও সাপ নির্মুলে কিংবা আগাছা পরিষ্কারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। 

আজকে শেখ হাসিনা হলে সাপ দেখাতে পাওয়া ছাত্রী ফারহানা ইসামিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে মজা করে অনেকটা এভাবেই পোস্ট করেন, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলেন, ফজরের নামাজের জন্য ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকাতে গিয়ে দেখলেন দরজার উপরে বসে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন লাগবে একবার ভাবুন তো? অথবা ধরুন আপনার অন্যতম সম্বল চশমা ছাড়াই টয়েলেট এ গিয়ে দরজা আটকানোর পর দেখলেন কিছু একটা পড়ে আছে পা দিয়ে নাড়া দিতে গিয়ে দেখলেন সাপ। দরজা আটকানো আপনি এবং সে দুজনই ভিতরে, ভেবে দেখুন তো একবার।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের মাঝের যে জায়গাটা এবং শেখ হাসিনা হলের সামনে ও পেছনের জায়গায় অনেক জঙ্গল হয়ে আছে। প্রকৃতির এতই বিস্তর ভালোবাসা যে নিচতলার রুমের বেলকনি থেকে বনলতা ভিতরে চলে আসছে। কিছুদিন পর হয়ত রুমের মধ্যেও চলে আসবে।  প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়!

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. রিফাত বলেন, আমরা আগে গরমের সময় ফ্লোরে ঘুমাতাম। কিন্তু এখন আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি। তাছাড়া ক্যাম্পাসের ল্যাম্পপোস্টগুলোর বেশিরভাগই নষ্ট। রাতে হাঁটাচলা এখন বিপজ্জনক। 

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কাফি মৃধা বলেন, ক্যাম্পাসের সব জায়গায়ই এখন সাপ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি। ৫০ একরের ক্যাম্পাসে আগাছার জন্য পা রাখার জায়গা নেই। কিন্তু প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে অ্যান্টিভেনম আছে কিনা জানতে চাইলে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার শাম্মী আরা নিপা জানান, মেডিকেল সেন্টারে সাপে কামড়ের কোনো চিকিৎসা নেই। শুনেছি সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে সাপের উপদ্রব অনেক বেড়েছে।তবে এখন মেডিকেল সেন্টারে কোনো সাপে কাটা রোগী আসেনি।

এ বিষয়ে জানতে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ ড. রেহেনা পারভিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জামান বলেন,আমাদের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় এত বড় ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখা দুষ্কর। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং মালি হিসেবে মোট মাত্র ৬ জন লোক আছে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে ২ জন ভিসি স্যারের দপ্তরে অন্য কাজ করে। আরও একজন মসজিদ পরিষ্কারসহ অন্যান্য দপ্তরে কাজ করে। বর্তমান ভিসি স্যারের আমলে পরিচ্ছন্নতার জন্য কোনো লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান আছে।

সাপ নির্মূলে কার্বলিক এসিড দেয়া কিংবা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একাডেমিক ভবনের আশপাশে আমার প্রায়ই কার্বলিক এসিড এবং ব্লিচিং পাউডার দেই। হলের বিষয় তো আমরা দেখবো না, হল প্রশাসন দেখবে।