৩০ জুলাই ২০২৩, ১৬:০৭

বিদেশে পড়া শেষে দেশে না ফেরার প্রবণতা বাড়ছে কুবি শিক্ষকদের

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফিরে আসছেন না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। এ কারণে ইতোমধ্যে ৫ জন শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া আরও তিন শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূ্ত্রে জানা গেছে।

তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্ধ-শতেরও বেশি শিক্ষক বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। শিক্ষা ছুটি শেষে তাদের কতজন দেশে ফিরবেন সেটি নিয়েও দেখা দিয়েছে আশঙ্কা। বিদেশে পড়তে গিয়ে দেশে ফিরে না আসার প্রবণতা বাড়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে দেখা দিয়েছে উদ্বিগ্নতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও অর্থ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদান না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ৈর আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফিদা হাসান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আবুল বাসার, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাহিদ শাহ্, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তাসনিমা আকতারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ছুটিতে থাকাকালীন এই শিক্ষকগণ যে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছিলেন তার মোট ৯০ লাখ ৫ হাজার ২৮২ টাকা টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি টাকা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। 

এছাড়াও চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে তিন শিক্ষকের বিপরীতে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। তারা হলেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসাইন, একই বিভাগের আরেক শিক্ষক মো. কামরুল হাসান মজুমদার এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন। 

এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৬৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন অর্ধশতেরও বেশি শিক্ষক। শিক্ষা ছুটি শেষে তাদের অনেকেই দেশে ফিরে কর্মস্থলে যোগ দেবেন না বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। 

বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকরা। এ বিষয়ে কুবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইনুল হক বলেন, বিদেশের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা যায় তারা নিংসন্দেহে মেধাবী। তারা যখন শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে যায় তখন অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা পায়, যা এখানে পাওয়া যায় না। ফলে দেশের মেধাপাচার থেকে শুরু করে শিক্ষক সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই সংকট নিরসনে সরকারিভাবে তাদের ভালো সুযোগ সুবিধা তৈরি কর দিতে পারলে মেধা পাচারের প্রবণতা কমে আসবে। 

বিদেশে পড়া শেষে নিজ কর্মস্থলে যোগদান না করা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতি। এই চিত্র শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন সিন্ডিকেট সদস্য ছিলাম, তখনও প্রতি মিটিংয়ে এক দুইজন করে পেতাম যারা চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে চায়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পরে যখন এই বিষয়টি দেখলাম তখন বিশ্ববিদ্যালয় যাতে আর্থিকভাবে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেটা নিয়ে কাজ করেছি।

ছুটি শেষে যোগদান না করা শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়ে বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ ছুটি কাটাতে যায়, যতদিন ছুটিতে ছিল ঠিক ততদিন সার্ভিস দিতে হয়। এই সময়টা যারা সার্ভ করে না তাদের কাছ থেকে ছুটিকালীন যে অর্থ সুবিধা পেয়ে থাকে তা সুদ সহ ফেরত দিতে হয়। আর আমরা সেটাই করছি।