২৬ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৩

আন্তঃকোন্দলে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, স্থবির কুবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ। একসময়ে একসাথে কাজ করলেও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ২০২০ সালের পর থেকে বঙ্গবন্ধু পরিষদ এখন দুইভাগে বিভক্ত। একটি অংশের বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ড. কাজী কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আমান মাহবুব। সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির ১৫টি পদেই নেতৃত্ব দিয়েছে তাঁদের পক্ষ। আরেকটি অংশের দায়িত্বে রয়েছেন সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকী ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান। দ্বিতীয় অংশের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে উপাচার্যপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তাঁদের নেতা ওমর সিদ্দিকী আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের আন্তঃকোন্দলের কারণেই স্থবির হয়ে পড়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। 

সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কথা থাকলেও দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার অভাবে ভেস্তে যায় নির্বাচন। একপক্ষ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করা হচ্ছে বললেও অন্য পক্ষের দাবি ছিল নিয়মের ব্যত্যয়। এরপর আর নির্বাচনের মুখ দেখেনি সংগঠনটি। এতে সাত মাস অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারী এ সংগঠন। কবে নাগাদ নতুন কমিটি গঠন হবে, সে সম্পর্কেও জানে না কেউ। এর ফলে শিক্ষকদের ওপর বিভিন্ন অন্যায্য আদেশ চাপিয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন সম্ভব না হলে ১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ সভা আহ্বান করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে।

সে অনুযায়ী ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২৩ এর নির্বাচন আয়োজন করে তৎকালীন পরিষদ। তবে নির্বাচনের দিন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা ভোট কেন্দ্র দখল করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেননি। সময়মতো ভোটগ্রহণ করতে না পারায় নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

২০২৩ সালের কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ ও কমিশন গঠনে শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা করা হয়নি দাবি করে নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি উপাচার্যপন্থি এ অংশটি। এরপর ভোটগ্রহণের নির্ধারিত দিনে নিরাপত্তার কথা বলে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোটগ্রহণে বাধা দেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও তাঁর অনুসারীরা। নির্বাচন কমিশন তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ভোটগ্রহণের সুযোগ করে দিতে একাধিকবার অনুরোধ করলেও কেন্দ্র ছাড়েননি তাঁরা। শেষ পর্যন্ত বেলা ২টায় ভোটগ্রহণের সময় শেষ হলে কেন্দ্র ত্যাগ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর অনাস্থা প্রকাশ করে ২৪ নভেম্বর চিঠি দেয় তাঁরা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনাস্থা প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণ সভা ডাকার কথা। তবে এ সময়ের মধ্যে সাধারণ সভা আহ্বান করা হলেও যোগ দেয়নি উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা। ফলে সভার কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় সে সময় বাধ্য হয়ে সভা মুলতবি করে তৎকালীন কমিটি।

এরপর থেকে অচল শিক্ষক সমিতি। তবে কমিটি না থাকায় শিক্ষকরাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে দাবি করছেন উভয়পক্ষের নেতারা। 

কামাল-আমান সমর্থিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের দিন শিক্ষকদের একটি পক্ষ বিভিন্ন ইস্যু তুলে নির্বাচন হতে দেয়নি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি না থাকলে শিক্ষকরা তাদের দাবিগুলো উত্থাপন করতে পারে না। শিক্ষকের স্বার্থেই কমিটি গঠন প্রয়োজন।

ওমর-জাহিদ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সমর্থিত নেতা এনএম. রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির দায়িত্বে যারা ছিল তারা দুরভিসন্ধিমূলকভাবে কোনো প্রক্রিয়া না মেনে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার কথা চিন্তা করে তফসিল ঘোষণা করায় আমরা নির্বাচনে যাইনি। তবে শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার জন্যই সমিতি থাকা জরুরি।

একে অপরের ওপর দোষ চাপালেও উভয় পক্ষই এখন সমিতি গঠনের পক্ষে বলে দাবি করছেন। তবে উদ্যোগের অভাবে গঠন হচ্ছে না নতুন কমিটি।

কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২২ এর সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই নির্বাচন আয়োজন করেছি। সাধারণ সভাও ডেকেছি। তাঁরা (উপচার্যপন্থি) নির্বাচন হতে দেয়নি, আবার সাধারণ সভায়ও আসেনি। শিক্ষক সমিতি না থাকার পুরো দায় তাদের। এখন নির্বাচন দিতে হলে দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষক স্বাক্ষর দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।’

উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের নেতা কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেটার জন্য আমরা উভয়পক্ষই দায়ী। সর্বশেষ যারা সমিতির দায়িত্বে ছিল তারা এবারও চতুরতার সঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। সে জন্য আমরা নির্বাচন বাধা দিয়েছি। কিন্তু এখন আমরা চাই নির্বাচন হোক। শিক্ষক সমিতি থাকুক।’

উভয়পক্ষ চাইলেও কমিটি কেন গঠন হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা উদ্যোগ নেব। তাঁরাও যদি উদ্যোগ নেয়, আমরা সাড়া দেব।’