ডেঙ্গু আতঙ্কে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা, উদাসীন প্রশাসন
সারাদেশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ্বর। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে মানুষ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই পর্যপ্ত ডাস্টবিন ব্যবস্থা। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না ক্যাম্পাসের ময়লা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পাশের পুকুর, প্রশাসনিক ভবনের নিচে, একাডেমিক ভবনের পাশে, ছাত্রী হল সম্মুখে, মন্দিরের পাশে, ক্যাফেটেরিয়ার পাশে, মেইন গেটের দক্ষিণে, ছয়দফা বেদীর পিছনে,অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ের পিছনে ও বিভিন্ন জায়গায় অপরিচ্ছন্ন এবং পানি জমে আছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে বিভিন্ন জায়গায়ও পানি জমে থাকে। ফলে বাড়ছে মশার উপদ্রপ।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন মাত্র ৬ জন। এদের মধ্যে ৩ জন ক্যাম্পাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত, বাকিরা অন্য দপ্তরে কাজ করছে।
এদিকে মেডিকেল কলেজের একটি সূত্র বলছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২৮৫ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬৮৯ জন। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক রয়েছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। এজন্য ক্যাম্পাসে ডেঙ্গু ছড়ানোর আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তাঁরা জানান, আমাদের অনেকের মধ্যে জ্বর আসছে। আমরা আতঙ্কে আছি। সারাদেশে যে পরিমাণ ডেঙ্গুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সন্দেহ থেকে যায়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে জলাশয় আছে যেটি ডোবায় পরিণত হয়েছে।এজন্য ভয়টা একটু বেশিই। এর একটা সমাধান দরকার।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ বেলাল জানান, ডেঙ্গু এখন আর শুধু ঢাকার মাথা ব্যথা না, এটা এখন জাতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের খবর শোনা যাচ্ছে। যা ধীরে ধীরে ভয়ানক আকার ধারণ করছে। আমার ক্যাম্পাসের কয়েকজন বন্ধুর ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে বার বার কথা বললেও প্রশাসন তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এখন একটাই দাবি দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সেই সাথে যদি সম্ভব হয় ভার্সিটির মেডিকেলে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হোক।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. শাম্মী আরা নিপা জানান, শিক্ষার্থীরা জ্বর নিয়ে অনেকে এসেছেন। তবে নির্ণয়ের মতো যন্ত্রপাতি বা মেশিন আমাদের নেই। সাধারণ কিছু উপসর্গ দেখা মিলেছে। শিক্ষার্থীদের জ্বরের সংখ্যাটা তুলনামূলক অনেক বেশি। সবাইকে সচেতন থাকার কথা জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এডিস ইজিপ্টি মশা এই ভাইরাসের বাহক। পানি স্থির বা জমা থাকলে এখানে তারা ডিম পাড়ে। এছাড়া কোনো স্থানে অপরিচ্ছন্ন থাকলে সেখানেও এমন হতে পারে।
এ বিষয় নিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, ঝোপঝাড়ে, ডোবা-নালা বা পুকুরে পানি জমা ও অপরিচ্ছন্ন থাকলে সেখানে পরিষ্কার রাখা জরুরি। স্প্রে করতে হবে যাতে লার্ভা জন্মাতে না পারে। মনিটরিং ব্যবস্থা করে সর্বদা নজর রাখতে হবে যে কোনো স্থানে পানি জমে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় আছে কিনা। শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে। তাহলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ক্যাম্পাস ভালোভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ডাস্টবিনে চাকা পাশ দিয়ে খোলাট ব্যবস্থা না থাকায় ময়লা পরিষ্কারে আমাদের বেগ পেতে ইচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় কোনো ডাস্টবিন নেই যেখানে ময়লা রাখা যাবে। তবে যে জনবল আছে তা দিয়ে ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি। হলের বিষয় তো হল কর্তৃপক্ষ দেখবে।
মশা নিধনে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি জানান, আমরা একাডেমিক ভবনের আশপাশে ব্লিসিং পাউডার দিচ্ছি। মশা নিধনে শুধুমাত্র ব্লিচিং পাউডার কতটা কার্যকর থেকে যায় সেই প্রশ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, উপাচার্য মহোদয় এ বিষয় এস্টেট শাখাসহ অন্যান্যদের সাথে আলোচনা করেছেন। হল প্রশাসনসহ অন্যদের পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন করার কাজ অব্যাহত আছে।