২১ জুলাই ২০২৩, ২১:৩১

খাদিজার জামিন শুনানি মুলতবি, ৩১ সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্বেগ

খাদিজাতুল কুবরা  © ফাইল ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জামিন শুনানি চার মাস মুলতবি করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছে ৩১টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শুক্রবার (২১ জুলাই) প্রতিবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা বিনাবিচারে প্রায় এক বছর সময়কাল কারাবন্দি থাকা অবস্থায় হাইকোর্ট কর্তৃক জামিন প্রদান করার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও চেম্বার আদালত জামিনাদেশ স্থগিত করেছেন। ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে খাদিজার আপলি শুনানি আপিল বিভাগ চার মাস মুলতবি করেছেন।  

তারা বলে, জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশ সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিবর্তনমূলক আইনে একজন নারী শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় ধরে কারাবন্দি থাকার পর হাইকোর্টের জামিনাদেশ পুনরায় চেম্বার আদালত কর্তৃক স্থগিত করা এবং সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আপিল শুনানি আপিল বিভাগ কর্তৃক চার মাস মুলতবি করার ফলে খাদিজাকে বিনা বিচারে আরও চার মাস কারাবন্দি থাকতে হবে।  

বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বলে, আমরা মনে করি, এরূপ আদেশ জনগণের ন্যায়-বিচার পাওয়ার পরিপন্থী। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, সেখানে খাদিজার মতো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বিনা বিচারে এক বছরের বেশি সময় কারাগারে বন্দি থাকতে দেখে দেশের কোটি কোটি জনগণের মতো আমরাও হতবাক, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ।

আরও পড়ুন: 'কিডনি স্টোনে' আক্রান্ত জবি ছাত্রী খাদিজা কারাগারে ভালো নেই

প্রতিবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের নেতারা বিবৃতিতে বলেন, আমরা অবিলম্বে জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার পরিপন্থী নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং উক্ত আইনে আটক খাদিজাসহ সব বন্দির মুক্তি দাবি করছি।

তারা বলেন, সংবিধানের মৌল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে দেশের জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যম, শিক্ষক, ছাত্র, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি এবং বিরোধীমত দমনের অন্যতম হাতিয়ার বানানো হয়েছে এ আইনকে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এ ধরনের নিবর্তনমূলক আইন কখনোই বলবৎ থাকতে পারে না।  

এসব অগণতান্ত্রিক আইনকানুন এবং দমন-পীড়ন স্বাধীনতার ঘোষণা তথা সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদার পরিপন্থী বলেও প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।  

প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গণসংস্কৃতি কেন্দ্র, সংহতি সংস্কৃতি সংসদ, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, রাজু বিতর্ক অঙ্গন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, প্রগতি লেখক সংঘ, গণসংস্কৃতি পরিষদ, স্বদেশ চিন্তা সংঘ, বাংলাদেশ থিয়েটার, তীরন্দাজ, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, এই বাংলায়, ঢাকা ড্রামা, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠী-সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশন, ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন, থিয়েটার'৫২, সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদ, শহীদ আসাদ পরিষদ, মাদল, বটতলা- অ্যা পারফরমেন্স স্পেস ও সমাজ চিন্তা ফোরাম।