কুবি অধ্যাপককে শোকজ, ভুক্তভোগীর দাবি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ৮৬তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করার অভিযোগ এনে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত সোমবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞাপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়। তবে কারণ দর্শানোর এ নোটিশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানহানিকর বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক।

জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন পত্র পাঠানো হত। সে অনুযায়ী ৯ জানুয়ারি পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণের আবেদন পত্র অগ্রায়ন করেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী। এরপর ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের চাকুরি স্থায়ীকরণের আবেদন বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সে সিদ্ধান্ত না জানায় ১০ মার্চ আরেক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণের আবেদন পত্র অগ্রায়ন করেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে প্ল্যানিং কমিটিকে শুধু নিয়োগে সুপারিশের কথা বলা আছে; স্থায়ীকরণের বিষয়ে প্ল্যানিং কমিটির কোনো ভূমিকা উল্লেখ নেই।

এরপর ১৫ মার্চ রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে ৮৬তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত জানিয়ে পুনরায় উভয় শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণের আবেদন বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে প্রেরণ করতে বলা হয়। তবে প্ল্যানিং কমিটির চাকরি স্থায়ীকরণের আবেদন প্ল্যানিং করার সুযোগ নেই দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে পরিসংখ্যান বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি।

এ বিষয়টিকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করার অভিযোগ এনে প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে প্রশাসন। নোটিশে প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীকে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-২০১৮ এর ৩ (খ) এর পরিপন্থী হওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করে কেন যথোপযুক্ত দন্ড প্রদান করা হবে না, তা সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

তবে কারণ দর্শানোর নোটিশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী একটি আবেদন সিন্ডিকেটের আগেই পাঠানো হয়েছে। এরপর সিন্ডিকেটে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আমাকে কিছু না জানানোয় আগের মতো করেই আমি আরেকটি আবেদন অগ্রায়ণ করেছি। আবেদনগুলো ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াধীন থাকায় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ করার সুযোগ নেই বলে কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত জানার পর আমরা নিয়ম মেনেই প্ল্যানিং কমিটি আরেকজন শিক্ষককের চাকরি স্থায়ীর সুপারিশ করেছে। অথচ পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্মানহানি করতে আমাকে শোকজ করা হয়েছে এবং চিঠিতে মানহানিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিভাগীয় প্রধানের অগ্রায়নের আগে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্ল্যানিং কমিটিকে জানানো হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে ‘বিনা কারণে’ একজন অধ্যাপককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশ। সংগঠনটির কামাল-আমান নেতৃত্বাধীন অংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, একজন অধ্যাপককে প্রশাসন এভাবে শোকজ করতে পারে না। এ ব্যাপারে আমরা রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলেছি। তিনিও বিষয়টিতে একমত। আগামী রোববার চিঠিটি সংশোধন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন ছুটিতে দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এই বিষয়ে আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলে দেখব। এটা যেহেতু আইনের সাথে সম্পর্কিত, তাই আমি মতামত দিতে পারি না।


সর্বশেষ সংবাদ