২১ জুন ২০২৩, ২৩:৫৫

শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়নি, সরিয়ে দেওয়া হয়েছে: ডিসি রমনা

গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আশরাফ হোসেন  © টিডিসি ফটো

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আশরাফ হোসেন বলেছেন, সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করা ছাড়াই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যদি কাউকে আটক করা হয়ে থাকে তবে ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের বিষয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ বুধবার (২১ জুন) রাত ৯ টা ৪৪ মিনিটে নীলক্ষেত মোড়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ পুলিশের

আশরাফ হোসেন বলেন, কোন ধরনের ধরনের লাঠি চার্জ ছাড়াই আমরা তাদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা—সেটি আমার অফিসারদের সাথে আলোচনা করে বলতে হবে। আপনারা নিজেরাই দেখেছেন সারাদিন নীলক্ষেতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি অবরোধ করে রাখা হয়েছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে অনেকবার বৈঠক করে সাতটি দাবির মধ্যে ৬টি মেনে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ইডেন কলেজ অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের সাথে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা মিটিং করে উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে ছয়টি পয়েন্ট শিক্ষার্থীদের সাথে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু আরেকটিতে পয়েন্ট অযৌক্তিক হওয়ায় সেটির সাথে তারা একমত হতে পারেননি। 

শিক্ষার্থীদের আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সরিয়ে না দিয়েছি তার আগ পর্যন্ত তারা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে রেখেছে। এতে জনগণের চরম ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে যাবে এমন আশ্বাস দিয়েও বারবার তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে—যুক্ত করেন রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আশরাফ হোসেন।

আন্দোলনস্থল থেকে একজনকে আটক করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা

আন্দোলনে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ভিন্ন মদদ নিয়ে অংশ নিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, আমরা জানতে পেরেছি বামপন্থী কিছু ছাত্র সংগঠন এখানে এসে একত্রিত হয়েছে। তাছাড়া কর্তৃপক্ষেরও আশঙ্কা ছিল যে এরা ছাত্র নয়। এখানে এসে একটি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা  করেছে। যেটি আমাদের সতর্কমূলক অবস্থানের জন্য তারা করতে পারেনি। আমরা তাদের আগেই এখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক বার্তা দিয়েছি।

শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার সময় সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়েছে  এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আমরা মর্মাহত। সাংবাদিক ভাইয়েরা যারা আমাদের সাথে সারাদিন ছিলেন, আমরা মনে করি তারাও আমাদের সহযাত্রী ও সহযোগী ছিলেন। তাদের উপরে যদি এভাবে আঘাত আসে সেটা আমি বলব আমার উপরে আঘাত। না চিনে না বুঝে হয়তো এমন চলে আসতে পারে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে আমি অনুরোধ করবো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

কোন ধরনের ধরনের লাঠি চার্জ ছাড়াই আমরা তাদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা—সেটি আমার অফিসারদের সাথে আলোচনা করে বলতে হবে—উপ-পুলিশ কমিশনার (রমনা), মো. আশরাফ হোসেন

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে প্রমোশনসহ সাত দফা দাবি নিয়ে আজ দুপুর ১২টায় নিউমার্কেটের বলাকা সিনেমা হলের সামনে জড়ো হন। পরে সাত কলেজের শিক্ষকরা এসে আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের ইডেন কলেজের সামনে নিয়ে আসেন।

তখন শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট)  অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের সাথে দেখা করতে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। আন্দোলনরত অন্য শিক্ষার্থীরা ইডেন কলেজের সামনে অবস্থান করে। আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবি মেনে নিলেও একটি মানেনি প্রশাসন৷ তাই এক দফা দাবিতে ইডেন কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে নীলক্ষেতে এসে পুনরায় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার জন্য পুলিশ এবং সাত কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকায় তাদের সড়ক থেকে সরানো যায়নি। পলে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।