ঈদের বন্ধে হল খোলা রাখার দাবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের
ঈদের বন্ধে হল খোলা রাখার দাবিতে আন্দোলন করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার (১৮ জুন) হল খোলা রাখার দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেয়। এসময় উপাচার্যকে না পেয়ে মুঠোফোনে কথা বলেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গত ৪ জুন ঈদের ছুটিতে হল খোলা রাখার দাবিতে প্রভোস্ট বরাবর আবেদনপত্র জমা দেয় বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। আবেদন পত্রে শিক্ষার্থীরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও ঈদুল আযহার ছুটি ১১ই জুন রবিবার হতে ৬ই জুলাই বৃহস্পতিবার। হল বন্ধ অবস্থায় এই দীর্ঘ ছুটি আমাদের পড়াশোনার অন্তরায়। অনেকের বাড়িতে নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। চাকুরি প্রত্যাশীরা ত্রিশালস্থ কোচিং সেন্টারে ক্লাস এবং নিজ নিজ পড়াশোনা করছেন। এমতাবস্থায় হল বন্ধ থাকলে আমাদের ধারাবাহিক পড়াশোনায় ছেদ ঘটবে। অনেকেই টিউটরশিপের সাথে যুক্ত। এতদিন হল বন্ধ থাকলে তাদের টিউটরশিপ হুমকির মুখে পড়বে।
সে সময় প্রভোস্ট কাউন্সিলে আলোচনা করবেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার। এরপর গত বুধবার (১৪ জুন) প্রভোস্ট কাউন্সিল, প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় ১৮ জুন (রবিবার) হতে ৫ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হল বন্ধ থাকবে৷ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের ১৮ জুন বিকাল ৪টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়।
নির্ধারিত সময়ের আগে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করে চলে যান। হল ত্যাগ করার শেষ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু হলের অবশিষ্ট ছাত্ররা জড়ো হয়ে বন্ধ কমানোর দাবি জানিয়ে অবস্থান নেয়। ছাত্ররা জানায়, এর আগেও লিখিত ও মৌখিকভাবে হলের প্রভোস্টকে হল বন্ধের সময়সীমা কমাতে আবেদন জানানো হয়েছিল। এসময় কিছু ছাত্র উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর-এর মোবাইলে ফোন কল দিয়ে হলের ছুটি কমাতে অনুরোধ জানাতে থাকেন।
বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মমিন মিয়া হল খোলা রাখার দাবিতে জানান, প্রভোস্ট স্যার চাইলেই পারতেন হল খোলা রাখতে। ভিসি স্যার আর প্রভোস্ট স্যারের জন্যই দ্রুত হল বন্ধ হয়ে গেলো। আমরা যারা টিউশন করাই, অল্প কয়দিনের জন্য মেসে রুম নিতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক চাকুরী পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
এ ব্যাপারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, হল বন্ধের ব্যাপারটা একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। শিক্ষক কর্মকর্তাদের একটা বার্ষিক ছুটি এবং সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে যা গৃহীত হয়েছে। খোলা ক্যাম্পাসের হল মেইনটেইনেই যেখানে হিমসিম খেতে হয়, সেখানে নিজেদের ছুটি মাটি করে এত বড় ক্যাম্পাসের দায়িত্ব কেউই নিতে চাইবে না। নিয়মমাফিক এবং যৌক্তিকভাবেই হলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্ধ ক্যাম্পাসের দায়ভার হল প্রশাসনের নয়।
এ বিষয়ে উপাচার্য জানান, আমার ক্যাম্পাসের ৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী আসছিল প্রশাসনিক ভবনে হল খোলা রাখার অযৌক্তিক দাবি নিয়ে। যাদের একটা অংশ হলে থাকেও না। ৫ মিনিটের দূরত্বে যাদের বাসা, কারা কারা এটাতে ছিল সেটাও আমি জানি। ক্যাম্পাস এবং হল তার নিজস্ব নিয়ম এবং সিডিউল অনুযায়ী চলবে। একাডেমিক ক্যালেণ্ডার দিয়ে দেওয়া হয়েছে বছরের শুরুতেই। হল বন্ধের ব্যাপারটা পূর্ব নির্ধারিত, উপাচার্য চাইলেও নিয়ম বহির্ভূত হয়ে তার বাইরে কিছু করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের এরকম অযৌক্তিক দাবি মানার কোনো সুযোগ নেই।