১৬ জুন ২০২৩, ১২:৩৫

জবির হলে নবায়ন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

জবি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল  © ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র আবাসিক হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল’-এর আবাসিক সিট পুনরায় নবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে নবায়ন ফির নামে বিভিন্ন খাতে অর্থ আদায় করছে প্রশাসন। এমনটাই অভিযোগ করেছেন হলটির ছাত্রীরা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে হল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা কাজ করতে চান, এজন্য অর্থের প্রয়োজন রয়েছে।

জানা যায়, ০৭ জুন আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিট নবায়ন ও অন্যান্য খাতে ফি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে সিট নবায়ন করতে ছাত্রীদের কল্যাণ, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ফি, দরিদ্র তহবিল ছাড়াও বেশকিছু খাতে মোট ৩ হাজার ৫০০ টাকা টাকা ফি চেয়ে নোটিশ জারি করা হয়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, নোটিশে প্রকাশিত অধিকাংশ ফি-ই বেনামি। একইসাথে নোটিশে উল্লিখিত অধিকাংশ খাতের বাস্তবায়ন হয় না বলেও দাবি করেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীদের অভিযোগ, অর্থনৈতিকভাবে সংকটকালীন সময়ে টাকা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের চরম বিপদে ফেলেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ১৬টি বিষয় উল্লেখ করে হলের নবায়ন ফি চাওয়া হয়েছে যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয় না। ২-৩টি খাত ছাড়া বাকিগুলো অপ্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করেন হলে থাকা শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে অপূরণ বিষয়গুলো হল- হল ছাত্রীদের কল্যাণ তহবিল ২০০ টাকা, হল ক্রীড়া (আভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, হল ধর্মীয় (আভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, হল পরিচয়পত্র নতুন/হারানো ১০০ টাকা, হল সাংস্কৃতিক (আভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, হল দরিদ্র তহবিল ৫০ টাকা, হল লাইব্রেরী (আভ্যন্তরীণ) ৫০ টাকা, হল বিতর্ক (আভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, সমাজ সেবা ১০০ টাকা,হল পড়ার কক্ষ ১০০ টাকা, উন্নয়ন খাত ৩০০ টাকা, বিবিধ ১০০ টাকা।

আরও পড়ুন: জবির ছাত্রী হলের ক্যান্টিনে খাবারে তেলাপোকা

এদিকে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীরা হলে উঠতে এলটমেন্ট চার্জ ১ হাজার ৯৫০ টাকা ও বাৎসরিক ফি ৩৬০ টাকা দিতে হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এলটমেন্ট চার্জ নেই তবে বাৎসরিক ফি দিতে হয় ২৪০ টাকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলে এলটমেন্ট চার্জ ১ হাজার টাকা জামানত হিসেবে দিতে হয়, বাৎসরিক ফি ১ হাজার ১৫০ টাকা। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে এলটমেন্ট চার্জ ৬৫০ টাকা ও বাৎসরিক ফি ১০০ টাকা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। তার মধ্যে এই অতিরিক্ত হল ফি আমাদের জন্য দেওয়া অসম্ভব। প্রশাসন আশা দিয়েছিলো সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক সাপ্তাহ হয়ে গেলেও কোন সমাধান করছে না প্রশাসন।

নাম প্রকাশে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী জানান, প্রশাসন আমাদের অপ্রাসঙ্গিক কিছু খাত থেকেও টাকা নিচ্ছে, যার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয় না। বিতর্ক, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আরও বেশ কিছু খাতের জন্য যে টাকাগুলো নিচ্ছে সবগুলোই অহেতুক। খালি রমজান মাসে একটা দিন ইফতার করিয়েছে। এছাড়া আর জীবনে কিছুই দৃশ্যমান নয়।

চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, হলে উঠার সময় আমরা যে খাত গুলোতে একবার টাকা দিয়েছিলাম সেই বিষয়গুলো আবার নতুন করে সংযুক্ত করছে। ২-১ টা বিষয় ছাড়া হল প্রশাসন কোন কাজই করে নাই। হলের প্রতিটা ফ্লোরে সমস্যা।  এপ্লিকেশন জমা দিয়ে আসি কিন্তু আসানুরুপ কোন কাজই হয় না। ম্যামদেরকে কল দিলে বলে আগে জানাও নি কেন, কিন্তু উনাদের কল দিলে পাওয়াই যায় না। উল্টো মেয়েদেরকে ব্লেম দেওয়া হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপীকা রানী সরকার বলেন, শিক্ষার্থীরা কোন খাতে কত টাকা রাখতে চাচ্ছে, কোন খাতগুলো বাদ দিতে চাচ্ছে এবং তাদের অন্যান্য কোন দাবি থাকলে সেগুলোসহ প্রত্যেক ফ্লোর থেকে স্বাক্ষর নিয়ে একটি আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। সেটি উপাচার্য মহোদয়কে দেখনো হবে। তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখনো কোনো আবেদন পত্রটি জমা দেয়নি। 

তিনি আরও বলেন, এই জুন থেকে আগামী জুন পর্যন্ত কাজ করব বলে আমি এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলেছি। আমি না কাজ করলে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন। আগের প্রভোষ্ট কি করেছে না করেছি আমি জানি না। মেডিকেল সেন্টার, ডিবেটিং সোসাইটিসহ আমি উন্নয়ন মূলক কাজ করব। এ জন্য অর্থের প্রয়োজন রয়েছে।