৩০ মে ২০২৩, ১৫:৩৪

লিফটবিহীন দশতলা ভবনে থমকে আছে শিক্ষা কার্যক্রম

  © টিডিসি ছবি

দশতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল। শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ বসানো, বৈদ্যুতিক লাইট-ফ্যান, টয়লেট, বেসিন, পানিসহ সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন। সবকিছুই পুরোপুরি রেডি তবে শুধু লিফট নেই। যার কারণে এই ভবনে থমকে আছে শিক্ষা-কার্যক্রম। এতবড় ভবন আর সুসজ্জিত ক্লাসরুমের অধিকাংশই ফাঁকা পড়ে আছে। 

চিত্রটি রাজধানীর ঢাকা কলেজের। নানান সংকটের মাঝে প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময়ের নির্মাণযজ্ঞ শেষে আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলে উঠেছিলো নতুন নির্মিত ১০ তলা ভবন। তবে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর চার বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই ভবনে লিফট সুবিধার চালু করা যায়নি। ফলে নবনির্মিত বিশাল এই ভবনের কোনো সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছেননা কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

জানা গেছে, ভবনটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর ‘একাডেমিক কাম এক্সামিনেশন হল ভবন’ নামে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন ঢাকা-১২ আসনের সংসদ সদস্য  ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালের নামে ‘লেঃ শেখ জামাল একাডেমিক ভবন’ নামকরণ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ৪ বছরেরও বেশি সময় পার হলেও লিফট না থাকার কারণে বিশাল এই ভবনে পুরোদমে শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নতুন ভবনটির সামনে স্থাপন করা হয়েছে নতুন নাম ফলক। জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে মূল প্রশাসনিক ভবন থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ ও দর্শন বিভাগ ইতোমধ্যেই স্থানান্তর করা হয়েছে এখানে। মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ স্থানান্তর করলেও লিফট না থাকার কারণে কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। ভবনের দুইপাশের লিফটের ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে রাখা হয়েছে ইটের গাঁথুনি দিয়ে। 

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। জুয়েল রানা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিভাগ মূল ভবন থেকে এখানে স্থানান্তর করা হয়েছে পর্যাপ্ত জায়গা এবং নিয়মিত পাঠ নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে লিফট না থাকায় বিভাগের কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিনা। তাহলে নতুন ভবন করে কি লাভ হলো? আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন এই ভবনের লিফট স্থাপন করা হয়।

হাবিবুল্লাহ সিরাজি নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পায়ে হেঁটে চার তলা বলা সর্বোচ্চ ছয়তলা, সাততলা পর্যন্ত উঠা যায়। কিন্তু দশতলা পর্যন্ত যদি লিফটের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে কিভাবে উঠবো। আমরা শিক্ষার্থীরা না হয় উঠতে পারি কিন্তু অনেক শিক্ষকই বয়োজ্যেষ্ঠ এবং বৃদ্ধ তারা কিভাবে এত উপরে উঠবেন। এই সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের চার বছরেও লিফট লাগানো যায়নি এটিই লজ্জাজনক এবং হাস্যকর। আসলে সবকিছুর ক্ষেত্রেই ঢাকা কলেজ পিছিয়ে পড়েছে। 

একই সাথে বিষয়টি বারবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দৃষ্টিগোচর করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, আমি বলতে বলতে বিরক্ত৷ অনেকবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কোন কাজ হয়নি৷ জানিনা কবে কাজ শুরু হবে৷ 

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকত বলেন, এটার (লিফটের) প্রসেসিংটা (প্রক্রিয়া) আলাদাভাবে হয়৷ এর আগে প্রসেসিং (প্রক্রিয়া) শেষে যে ঠিকাদার কাজ পেয়েছিলেন তিনি মারা যাওয়ার ফলে নতুন করে রি-টেন্ডার হয়েছে ৷

তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটের কারনে এলসি খুলতে না পেরে একটু দেরি হয়ে গেছে৷ তবে এটার অর্ডার হয়ে গেছে।এছাড়াও আগামী জুন মাসের মধ্যেই পুরো লিফট স্থাপনের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।