বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রাইভারদের বেতন অর্ধলক্ষ টাকা!
সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালকরা (ড্রাইভার) সাধরণত ১৫তম কিংবা ১৬তম গ্রেডের চাকরিতে নিয়োগ পান। এই দুটি গ্রেডে জাতীয় স্কেলে বেসিক বেতন ৯ হাজারের কিছু বেশি। চাকরির শুরুতে বেতন-ভাতা সবমিলিয়ে মাসে ১৪-১৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। এরপর পদোন্নতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে বেতন-ভাতাও।
কিন্তু এই পদোন্নতি দিতে গিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে ৬টি পাবলিশক বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ড্রাইভারদের টেকনিক্যাল অফিসার, সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার দেখিয়ে নবম ও সপ্তম গ্রেডের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।
ইউজিসি বলছে, একজন ড্রাইভারকে যেভাবে টেকনিক্যাল অফিসার, সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসর দেখিয়ে সপ্তম এবং নবম গ্রেডের বেতন দেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। ড্রাইভার পদটি কর্মচারীর আওতাভুক্ত। এভাবে কর্মকর্তা স্কেলে বেতন প্রদানের সুযোগ নেই।
জানা যায়, জাতীয় স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোট ২০টি গ্রেড রয়েছে। ২০১৫ সালের আগে ১ম-৯ম গ্রেড প্রথম শ্রেণি, ১০ গ্রেড দ্বিতীয় শ্রেণি, ১১তম-১৬তম তৃতীয় শ্রেণি এবং ১৭তম-২০তম চতুর্থ শ্রেণি। এরমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি কর্মকর্তা পদমর্যাদার আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পদমর্যাদার। তবে চাকরি আদেশ, ২০১৫ এর ৮নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবী তার বেতন স্কেলের গ্রেড অনুযায়ী পরিচিত হবে।
১৫তম -১৬তম গ্রেডের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে গিয়ে এই ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, ৭ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার বেসিক বেতন জাতীয় স্কেলে ২৯ হাজার দিয়ে শুরু। চাকরির শুরুতে বেতন-ভাতা সবমিলিয়ে পেয়ে থাকেন প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা। আর ৯ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার বেসিক বেতন জাতীয় স্কেলে ২২ হাজার দিয়ে শুরু। চাকরির শুরুতে বেতন-ভাতা সবমিলিয়ে পেয়ে থাকেন ৩০ হাজারের বেশি। এরপর বছর বছর বাড়তে থাকে বেতন-ভাতাও।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির জন্য দীর্ঘদিনের নীতিমালা রয়েছে, সেই নীতিমালা অনুযায়ীই পদোন্নতি হচ্ছে। এখানে বিধিবহির্ভূতভাবে কিছু হয়নি।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের বলেন, একজন ড্রাইভারকে টেকনিক্যাল অফিসার, সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার দেখিয়ে নবম ও সপ্তম গ্রেডের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই। এধরনের ঘটনা বন্ধ করতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাজেটের সাথে ৫৫টি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে একাডেমিক বিষয়ে। আর্থিক সকল বিষয়ে তারা সরকারি নিয়ম মানতে বাধ্য। নিজস্ব যে নীতিমালাই থাকুক সরকারি নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ২০ খাতে আর্থিক অনিয়মের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায় বেতন-ভাতা, বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়মে জড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কয়েকটি বাদে প্রায় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ও পিছিয়ে নেই। এসব বিষয়ে শৃঙ্খলা আনতেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৫৫ দফা সতর্কপত্র পাঠানো হচ্ছে।