১৫ মে ২০২৩, ১৪:৪৫

‘অপরিকল্পিতভাবে’ চলছে জবির একমাত্র ডে-কেয়ার সেন্টার

পাঁচ বছর ধরে ‘অপরিকল্পিতভাবে’ চলছে জবির ডে-কেয়ার  © সংগৃহীত

প্রায় পাঁচ বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবেই চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ডে-কেয়ার সেন্টার। শিক্ষক ডরমিটরি ভবনের তৃতীয় তলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিশুদের জন্য চালু করা হয় ডে-কেয়ার সেন্টারটি। অফিস টাইমে শিশুদের দেখাশোনা করে এই ডে-কেয়ার সেন্টারের কর্মচারীরা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে ২০১৮ সালে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আসবাবপত্র এবং শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খেলনা অভাব, অপর্যাপ্ত কর্মচারী এবং অপরিকল্পিত অবকাঠামো নিয়েই প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ডে-কেয়ার সেন্টার। 

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার থাকলেও বিষয়টি না জানার কারণে সুবিধা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। যার মূল কারণ অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীই ডে-কেয়ার সম্পর্কে জানে না। তাই যথেষ্ট শিশু পায় না এবং তার দরুন আয়ও কম হয়।

ডে-কেয়ার সেন্টারের পরিচালক জানান, প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ডে-কেয়ার সেন্টার বিষয়ে অবহিত করতে সব বিভাগের চেয়ারম্যানদের চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তারা অবহিত না করায় এটি নিয়ে অজ্ঞতা আছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষক ডরমিটরি ভবনের তৃতীয় তলায় ছোট ছোট আটটি কক্ষে কিছু খেলনা, তাক, ফ্লোর বিছানা, চেয়ার, টেবিল, টিভি ও রঙিন কাগজের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টারটি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। সেখানে ৬ মাসের বাচ্চা থেকে ৫-৬ বছরের বাচ্চা রয়েছে।

অথচ একজন সুপারভাইজারসহ মাত্র ৩ জন নারী কর্মচারী দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ডে-কেয়ার সেন্টারটি। সেন্টারটিতে আটটি রুম রয়েছে। সেখানে ২৫ থেকে ৩০ জন শিশু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন সেখানে গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন বাচ্চা থাকে। বাচ্চাদের সার্বক্ষণিক দেখা-শোনা করার জন্য তিনজন আছেন। 

ছুটির দিন ছাড়া সেন্টারটি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ডে-কেয়ার সেন্টারে শিশুদের জন্য থাকা, খাওয়া, ঘুমানো, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, খেলাধুলা, বিনোদন ও প্রি-স্কুল সুবিধা রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী বাঁধন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই আমার বিয়ে হয়েছিল। আমার সন্তানের নাম রাজশ্রী। এখন তার বয়স দেড় বছর। বাড়িতে দেখাশোনার কেউ না থাকায় এখানে ভর্তি করিয়েছি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে 'জবি'র চেয়ে বেশি সেবা পাওয়া যায় বলে শুনেছি। এখানে বাচ্চা বেশি বা কম যাই হোক না কেন, দেখাশোনা করার লোক একেবারেই কম। তাদের আবার কেউ অসুস্থ হলে আরও সমস্যা। তবে কাজে নিয়োজিতরা খুবই আন্তরিক। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং আরেক শিশু মা সুমাইয়া বলেন, "জবির ডে-কেয়ারে যে সকল খেলনা ও আসবাবপত্র রয়েছে তা শিশুদের প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।"

আরও পড়ুন: ছয় মাসেও খণ্ডকালীন চাকরি পায়নি জবি শিক্ষার্থীরা

ডে-কেয়ার সেন্টারের সুপারভাইজার শাকিলা জামান সুবর্ণা বলেন, বর্তমানে ডে-কেয়ারে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪৪ জন। নিয়মিত আসা যাওয়া করেন অর্ধেকের বেশি। আর অতগুলো বাচ্চা সামলানো আমাদের জন্য কষ্টকর। এই মুহূর্তে অন্ততপক্ষে আরও ২ জন লোক নিয়োগ খুবই জরুরি। এছাড়াও কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ চার বছরের অধিক হলেও নিয়োগ স্থায়ী এবং বেতন বৃদ্ধি না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, ডে-কেয়ার সেন্টারটিতে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন খেলনা দ্রব্য ক্রয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় না কোন বরাদ্দ। তবে জরুরি প্রয়োজনে কর্মচারীরা নিজের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন খেলনা দ্রব্য ক্রয় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভাউচার দিয়ে অর্থ আদায় করেন। তবে এসব ভাউচার পাস করাতে দিনের পর দিন বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে হয় বলে জানান ডে কেয়ার সেন্টারের সুপারভাইজার শাকিলা জামান সুবর্ণা। 

ডে কেয়ার সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বলেন, আমি তাদের সকল সীমাবদ্ধার কথা শুনেছি। সমস্যাগুলো সমাধানে উপাচার্য স্যারের সাথে কথা হয়েছে। আর পরিকল্পিতভাবে একটা ডে কেয়ার সেন্টার তৈরির লক্ষ্যে আমরা ইউজিসিকে নোটিশ পাঠিয়েছি। আমরা বাজেট পেলে কয়েকজন লোক নিয়োগ দিব এবং কাজ শুরু করবো। 

বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ডে-কেয়ার সেন্টার তাদের নিজেদের আয় দিয়ে নিজেরা চলবে। আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন বরাদ্দ দেওয়া হবে না। তবে নতুন একাডেমিক ভবনে এটিকে স্থানান্তরের চিন্তা ভাবনা আছে আমাদের।