সপ্তাহের ব্যবধানে জবির দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু
গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় ফিরেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ। গত শনিবার (২৯ এপ্রিল) ফেরার পর হটাৎ খিচুনি দিয়ে অচেতন হয়ে পড়লে সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাজুর বাবার দাবি, তার ছেলের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান।
এ মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই আজ শনিবার প্রাণ হারালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শাওন। রাজধানীর পুরান ঢাকার ধূপখোলা বাজারে রাস্তার গ্যাসলাইন মেরামতের সময় বিস্ফোরণে দগ্ধ হন তিনি। শাওন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বিস্ফোরণের সময় তিনি বাজার করতে গিয়েছিলেন।
রাজুর বাবা বলেন, ঘটনার আগের দিন শুক্রবার রাজু, তার মা ও বোন একসাথে খাবার খান। এরপর মা ও বোনের বমি হয়। বাসায় ফিরে মসজিদে তার শরীরের মধ্যে অস্থির অস্থির লাগতে শুরু করে। তখন দেখেন সবাই ঘুমাচ্ছে। নিজের খারাপ লাগলেও আমি মাঠে যান। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখেন সবাই তখনও ঘুমাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রাজুর ফুফু রাজুকে ডেকে বলে, তোর নাকি আজকে রাতের ট্রেন ৯.৩০ টায়। ততক্ষণে আমিও ঘুমায় গিয়েছি। রাজু’র ফুপু ওকে তুলে দিয়ে, জামা কাপড় গুছিয়ে দিয়ে খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে, রাজুকে ভ্যানে তুলে দেয়। সেখানে রাজুর ক্লাসমেট সাদিয়ার সাথে তার দেখা হয়। পরে ট্রেনে উঠার আগেই রাজু তার সহপাঠীকে তার অসুস্থতার কারণ সন্দেহজনক বলে জানান।
রাজুর রুমমেট শরীয়তুল্লাহ জানান, রাজু খাওয়া দাওয়ার পর গায়ে হাত দিয়ে দেখেন তার শরীর অনেক গরম। পরে রাজু খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর হঠাৎ খিচুনির মতো হলে রুমমেট আরাফাত মিলে তাকে নিয়ে যান।
সহপাঠী সিফাত বলেন, এম্বুলেন্সে করে রাজুকে ঢাকা মেডিকেল নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত করা হলেও রিপোর্টটি এখনও পাওয়া যায় নি। ঘটনার পর রাজুর বাবা ঘটনার তদন্তে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
আরেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শাওন শনিবার (৬ মে) সকালে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে মারা যান। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার গ্যাসলাইন মেরামতের সময় বিস্ফোরণে শাওন দগ্ধ হয়েছিলেন। আরও আটজন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দগ্ধরা ধুপখোলা মাছ বাজারের পাশে থাকেন। একপাশে রাস্তায় তিতাস গ্যাস লাইনের মেরামত চলছিল। হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। এসময় তাদের শরীরে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। শাওনের শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে জানা গেছে।