মানা হচ্ছে না হাইকোর্টের নির্দেশ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থামছে না র্যাগিং
প্রতিবছর আকাশচুম্বী স্বপ্ন নিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়তে আসেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে তরুণরা অনেক সময় সিনিয়রদের র্যাগিংয়ের শিকার হন। র্যাগিংয়ের নামে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ‘আদব-কায়দা’ শেখানোর নামে সিনিয়ররা জুনিয়রদের কান ধরে ওঠাবসা করানো, রড দিয়ে পেটানো, পানিতে চুবানো, উঁচু ভবন থেকে লাফ দেয়ানো, সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়া, গাছে ওঠানো, ভবনের কার্নিশ দিয়ে হাঁটানো, এমনকি দিগম্বর পর্যন্ত করে। এমন অপমান, নিপীড়ন আর নির্যাতনের এই প্রভাব ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন।
র্যাগিংয়ের নামে এসব নির্যাতন বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোয় অবাধে চলছে র্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থী নিপীড়ন। শুধু তাই নয়, দেশের সব ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বন্ধে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি ‘অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড’ ও তা মনিটরিংয়ের জন্য ‘অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। তিন বছর পরও এখনো অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নির্দেশ পালন করেনি। এমনকি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসান এই নির্দেশের বিষয়ে অবগতও নয়।
সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একদল সিনিয়র নেত্রী নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে র্যাগিংয়ের নামে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা আরও একবার এই ভয়াবহতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। এই ঘটনার পর ‘অ্যান্টি র্যাগিং ভিজিল্যান্স কমিটি’ গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা জয়া র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে জান্নাত হলে ডেকে নিয়ে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করেছেন তাকে। এসময় তাকে কান ধরে ১০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
শুধুমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলপরী কিংবা বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়া নয়। চলতি বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন ঘটনা গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত ছিল। আর এসব ঘটনায়ই জড়িত ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি র্যাগিংয়ের বিচার চেয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক আবাসিক ছাত্রী। ওই ছাত্রী বলেন, ছাত্রলীগের এক বড় আপুর মাধ্যমে হলে উঠি আমি। ২২ ফেব্রুয়ারি আমাকে ওই বড় আপুকে কল করতে বলেন এক বড় ভাই। কিন্তু মোবাইলে ব্যাল্যান্স না থাকায় কল দিতে পারিনি। এ অবস্থায় ওই বড় ভাই এবং আবাসিক ছাত্রী হলের আরেক ছাত্রলীগ নেত্রী আমাকে ফোনে নানাভাবে হুমকি দেন এবং গালাগাল করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এর আগে ৩১ জানুয়ারি লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মাহির তার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, বড় ভাই শিশির আহমেদ শিহাব এবং তাঁর সঙ্গে থাকা তিনজনের হাতে র্যাগিংয়ের শিকার হন মাহির। বড় ভাইদের চিনতে না পারায় তাঁকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয় এবং গালাগাল করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এক্ষেত্রেও অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।
২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর কক্ষে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের ২০ শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীসহ মোট ১৬ শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায় প্রশাসন।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে লিখিত আবেদন করেও বিচার না পেয়ে রিয়াদ হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ডিন এবং ২২ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
গত ২২ জানুয়ারি শাহরিয়াদ মিয়া নামের এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নির্যাতনের পর হল প্রশাসনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শাহরিয়াদকেই প্রক্টরের কাছে সোপর্দ করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় তার বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিবিরের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না পেয়ে শাহরিয়াদকে ছেড়ে দেয়।
রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রোকসানা আক্তারের বিরুদ্ধে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রী ববলেন, রোকসানা আক্তার ভুক্তভোগীকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অত্যাচার-নির্যাতন করতেন। প্রতিবাদ করায় তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে, চুল ছিঁড়ে ফেলে, বঁটি দিয়ে মারতে উদ্যত হন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষ থেকে শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুধু সাম্প্রতিক সময়ে নয়। এর আগেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনায় বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র ছাত্রলীগ নয়। যখন যেই দল ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠনই এ ধরনের কাজ করে থাকে। ২০১৯ সালে বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলছিল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বন্ধে তুমুল প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিলো ছাত্রশিবিরের আধিপত্য। তাদের অনুমতি ছাড়া হলে ওঠা যেত না। নির্দেশের বাইরে গেলেই চলতো বেধড়ক মারধর। এককথায় বর্তমান ছাত্রলীগকে যে রূপে দেখা যাচ্ছে একসময় ছাত্রদল- ছাত্রশিবিরও সেই রূপে ছিলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয় সবাই শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়, কেউ ছাত্রলীগ কর্মী বা ছাত্রদল কর্মী হিসেবে ভর্তি হয় না। প্রশাসন যদি এই বিষয়টি মাথায় রেখে কে কোন ছাত্রসংগঠনের সেটি বিবেচনা না করে সব শিক্ষার্থীকে সমানভাবে বিবেচনা করে এবং কেউ অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয় তাহলে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন হোক বা অন্য কেই কেউই এধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সুযোগ পাবে না।
এদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজসহ দেশের সব ধরনের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বন্ধে গত ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি ‘অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড’ ও তা মনিটরিংয়ের জন্য ‘অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিলেন। ওইসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার জানিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে এ কমিটি গঠন করতে হবে।
তবে এরপর প্রায় তিন বছর পার হলেও এখনো অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এ নির্দেশ পালন করেনি। এমনকি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর এ নির্দেশের বিষয়ে অবগত নয়।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালে হাইকোর্টের নির্দেশের পর কমিটি গঠন করা হলেও বর্তমানে ওই কমিটির কার্যকারিতা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের নির্দেশের পর কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার দপ্তরে এ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে ‘অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড’বা ‘অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি’ নামে কোনো কমিটি নেই বলে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে জানানো হয় র্যাগিংয়ের প্রতিকার এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়টি প্রক্টরিয়াল টিম দেখাশোনা করায় পৃথক কমিটি গঠন করা হয়নি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. গোলাম ফেরদৌস বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড বা কমিটি না থাকলেও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের আওতায় প্রভোস্ট এবং চেয়ারম্যান এবং শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত টিম এ বিষয়গুলো দেখাশোনা করে। হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবগত আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ২০২০ সালে তিনি দায়িত্বে না থাকায় এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রক্টরিয়াল টিম, প্রভোস্ট এবং চেয়ারম্যানরা দেখাশোনা করেন। তবে হাইকোর্ট থেকে যদি এ সংক্রান্ত কোনো কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকে তবে আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এ ধরনের নির্দেশের বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি। ইতোপূর্বে এ ধরনের চিঠি এসেছে কিনা এ বিষয়ে জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রক্টর-প্রভোস্টরাই এ বিষয়গুলো দেখে থাকেন।
শুধুমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়। এই নির্দেশ পালন করেনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোও। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, আমাদের কলেজগুলোতে র্যাগিংয়ের ঘটনা নেই বললেই চলে। তারপরও কোনো সমস্যা হলে সেসব সমাধানের জন্য সরকারি কলেজগুলোতে একাডেমিক কাউন্সিল এবং বেসরকারি কলেজগুলোতে গভর্নিং বডি রয়েছে। অনেকসময় একই বিষয়ে একাধিক কমিটি হলে ওভারল্যাপিং হতে পারে। তবে মহামান্য হাইকোর্ট এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশ দিলে সেটিতো অবশ্যই মানতে হবে।
এ বিষয়ে রিটকারী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, হাইকোর্ট কোনো নির্দেশ দিলে সেটি যে কোনো প্রতিষ্ঠান মানতে বাধ্য। ২০২০ সালে হাইকোর্ট যখন এ আদেশ দিয়েছে তার পরেই সব প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কমিটি হওয়ার কথা ছিলো। তাছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিলো।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি; এ বিষয়ে আমি এখনও বিস্তারিত জানি না। আদালতের নির্দেশনা বিস্তারিত দেখে তারপর বিস্তারিত পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এধরনের কোনো নির্দেশ ইউজিসির কাছে আসলে সেই অনুযায়ী আমারা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে থাকি; এক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে। যেহেতু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরিয়াল টিম থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছিল। একারণে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ছিলো নির্দেশের পরেই এ ধরনের কমিটি গঠন করা। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে কমিটি গঠনও করেছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠন করেনি তাদের সাথে আমরা এ বিষয়ে যোগাযোগ করবো।