বঙ্গবন্ধু সবসময় শিশুদের প্রতি নমনীয় ছিলেন: ঢাবি উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় শিশুদের প্রতি নমনীয় ছিলেন, তাদেরকে ভালোবাসতেন বলেই এই দিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) দিবসটি উপলক্ষে ঢাবি ছাত্রলীগের আয়োজনে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুদের জন্য এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হলো, শিশুরা বঙ্গবন্ধু, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, জাতীয় পতাকা সহ বিভিন্ন ছবি আঁকার মাধ্যমে তাদের মাঝে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি তাদের মাঝে গভীর দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও আজকের এই শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রায় দুই শতাধিক শিশু অংশগ্রহণ করেছে। আমরা তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। বঙ্গবন্ধু যেমন শিশুদের প্রতি যত্নশীল ছিলেন তেমনই ছাত্রলীগও শিশুদের প্রতি সবসময়ই সদয় ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
প্রসঙ্গত, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন তিনি। তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব-প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে, ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীর বহু আকাক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসি’র এক জরীপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নির্বাচিত হন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেয়া হয়। বিদেশী ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তাঁর উচ্চকিত প্রশংসা করেন। বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তী কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহ, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে নানা আয়োজন করা হয়েছে।