ফুটেজ উদ্ধারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ: হাইকোর্ট
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনার এবং ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজগুলো উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় হল প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। ফুটেজ সরবরাহে ব্যর্থতায় আলাদা করে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট ফুলপরীর উপর নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনাপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনাপত্রে বলা হয়, প্রশাসনের সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহে ব্যর্থতায় আলাদা করে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। অভিযুক্ত হালিমা আক্তার উর্মীর মোবাইলে ধারনকৃত নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দ্রুত উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল আছে কিনা এব্যাপারে স্মুথ অপারেশনের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
হলসূত্রে জানা যায়, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে বারান্দা, ডাইনিং, অফিস, করিডোরসহ মোট ১২টি সিসিটিভি রয়েছে। যার ফুটেজ হল প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা রয়েছে। তদন্তে ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী সেদিন রাতে ডাইনিংয়ে নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে কমিটি। সে হিসেবে ডাইনিংয়ের সিসিটিভিতে ভিডিও ফুটেজ থাকার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি হল কমিটির কাছে ফুটেজ চাইলে তা সরবরাহ করতে পারেনি। হল থেকে জানানো হয়, টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে হল কর্তৃপক্ষ ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারিনি। সেজন্য হল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলকে দায়িত্ব দিয়েছিল। আইসিটি সেলও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসানুল আম্বিয়া বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার মতো এমন প্রত্যেকটি ডিভাইসে বায়োসের ব্যাটারি লাগানো থাকে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরও যেন ক্যামেরা সচল থাকে এজন্য এটা লাগানো হয়। হলের ওই সিসিটিভি ক্যামেরায় লাগানো বায়োসের ব্যাটারিটা আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এ সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। বাইরে থেকে অভিজ্ঞদের আনলে হয়তো সম্ভব হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনাপত্রের পূর্ণাঙ্গ কপি আমরা হাতে পেয়েছি। কপি পেয়ে রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। ক্যাম্পাস খুললে অফিসিয়ালি বিষয়টি জানা যাবে। আদালতের নির্দেশপালনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উল্লেখ্য, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে র্যাগিংয়ের নামে ফুলপরীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গত ১ মার্চ সানজিদা অন্তরাসহ পাঁচ অভিযুক্তকে ক্যাম্পাস থেকে সাময়িক বহিষ্কার, হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার, ভুক্তভোগী ফুলপরীর নিরাপত্তা ও তার পছন্দের হলে উঠানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে সেদিনই হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করে প্রশাসন। এছাড়া গত ৪ মার্চ পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে তাদের হল ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া ফুলপরীকে তার পছন্দের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সিটের ব্যবস্থাও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।