ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ কুবি ছাত্রলীগের, পাশে পুলিশ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের মারধরের ঘটনার বিচার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। সড়ক অবরোধ কর্মসূচি থেকে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
এ হামলার ঘটনার বিচার নিশ্চিতে আজ বুধবার বিকেলে ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার হয়েছিল। বিচারের কোন পদক্ষেপ না দেখে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলতলী বিশ্বরোডের সড়ক অবরোধ করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসম শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশে সড়কে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
এসময় তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচার এবং প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানান। নেতাকর্মীরা 'সুষ্ঠু বিচার করে দে, না হয় গদি ছাইড়া দে', 'প্রক্টরের দূর্নীতি মানিনা না মানব না', 'প্রক্টরের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, এক দফা এক দাবি প্রক্টরের পদত্যাগ চাই' আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই'সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
পরে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বিচারের আশ্বাস দিলে দেড় ঘন্টা পর অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, আজকে রাতের মধ্যে আমরা হামলাকারীদের গ্রেফতার করবো।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তাদের মধ্যে আসলে ক্যাম্পাসের একটা ইস্যু নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল, ক্ষোভ থেকে সড়ক অবরোধ করেছিল। আমি সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে কথা বলেছি, তারা খুব আন্তরিক ছিল এবং যৌক্তিক বিষয় নিয়ে কথা বললে তারা বুঝে। এ সড়কটা যে বাংলাদেশের লাইফলাইন তারা এ বিষয়টা বুঝতে পেরেছে এবং অবরোধ প্রত্যাহার করেছে। আমরা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।
দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাফিউল আলম দীপ্ত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আজকে রাতের মধ্যে অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হলে আমরা আগামীকাল আবার অবরোধ করা হবে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় এদিন দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আল আমিন কনফেকশনারির সামনে। তখন স্থানীয় ছাত্রদল নেতা ও বহিরাগতদের দিয়ে নিজেদেরই ৩ নেতাকে বেধড়ক মারধর করেন শাখা ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ।
মারধরকারীরা হলেন কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা রনি মজুমদার এবং কুবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব চন্দ্র দাস, অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী কাওসার হোসেনসহ ১০-১২ জন ছাত্রদল-ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন, সালমান, সাদ্দাম, সায়েমসহ কয়েকজন আল আমিনের দোকানে বসে নাস্তা করছিলেন। এমন সময়ে রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত ১২-১৫ জন নেতাকর্মী অতর্কিত হামলা চালায়।
আরও পড়ুন: নিজ নেতাদের ছাত্রদল দিয়ে পেটাল কুবি ছাত্রলীগ
এতে শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলে সাধারণ সম্পাদক এনায়েত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান, বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সাইদুল ইসলাম রোহানের হাত ভেঙে গেলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে গত ৩০ জানুয়ারি রাত ১০টায় রেজা-ইএলাহী সমর্থিত বিপ্লব চন্দ্র দাসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে উঠতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা প্রদান করেন। পরে এক সহকারী প্রক্টরের সাথে বাগবিতণ্ডা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর জেরে গতকাল ৭ মার্চ এনায়েত উল্লাহ এবং সালাম চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে।
বহিষ্কাররের পরদিনই এ মারধর পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানারও যোগসাজেশ রয়েছে বলেও দাবি করে তারা তার (প্রক্টর) পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাস গেটে অবস্থান নেন।
ছাত্রলীগ নেতারা জানান, রেজা-ইএলাহী সমর্থিত অভিযুক্ত বিপ্লব চন্দ্র দাস ও অন্যান্য নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা সমর্থিত। এ বিষয়ে হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কল কেটে দেন।
ভুক্তভোগী সালমান চৌধুরী জানান, আমাকে বিপ্লব চন্দ্র দাস ডেকে নিয়ে যায় এবং প্রশাসন বহিষ্কার করলেও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছি জানতে চেয়ে আমাকে এবং হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহকে মারধর শুরু করেন।
এদিকে বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ইন্ধন হিসেবে মন্তব্য করে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাসান বিদ্যুৎ বলেন, খুনি বিপ্লব ও ছাত্রদলের লোকজন কীভাবে একজন হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে মারধর করে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধনে তারা আজ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর সামনে দিয়েই শতাধিক বহিরাগত নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে অস্ত্রের মহড়া দেয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পরই ফাঁকা গুলি ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। এ অংশের নেতৃত্বে ছিলেন খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি এবং মারধরকারী বিপ্লব চন্দ্র দাস।
এবিষয়ে কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক এস এম আতিকুউল্লাহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলেছি। বহিরাগতরা যেহেতু আক্রমণ করেছে তাই আমরা তাদেরকে যতদ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করব।
জানতে চাইলে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এসব বিষয়ে আমার কোন ইন্ধন নেই। যারা এমনটি বলছে তারা এটিকে প্রমাণ করতে হবে। প্রশাসন কেন ব্যাবস্থা নিচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি তারা এটা তাদের বিষয়।