জবি শিক্ষকদের নতুন সিদ্ধান্তে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনার কী হবে
গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে শুরু থেকে অসন্তোষ ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)। পরে জবির সঙ্গে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর পরীক্ষার শুরুর আগে এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে গুচ্ছে না যাওয়ার দাবি তোলা হয়। কিন্তু শেষে দেখা যায়, সবাই গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
গেল বছরগুলোর মতো চলতি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অসন্তোষের কথা জানান শিক্ষক সমিতির নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার সাধারণ সভা করে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ ভর্তি পরক্ষায় না থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
জবি শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, আমরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকব না। এক সপ্তাহের মধ্যে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা আজ এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছি। আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে।
অবশ্য এর আগে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অসন্তোষের কথা জেনে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী মার্চ মাসের শেষ দিকে গুচ্ছের অধীনে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে পরীক্ষা আয়োজক কমিটি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে সভায় বসবে সংশ্লিষ্টরা। আর শিক্ষকদের অসন্তোষ থাকলেও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে চলতি বছর গুচ্ছ পদ্ধতির এ পরীক্ষা চলমান রাখার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দেন।
আরও পড়ুন: গুচ্ছে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ইবি শিক্ষকরা
এছাড়া এ সভায় শিক্ষামন্ত্রী আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সেশন থেকে একটি গুচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তাব করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার আহ্বান করেছেন।
তবে প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনার পরেও গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কীভাবে নিয়েছেন? বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে একাডেমিক কাউন্সিল। এজন্য তারা উপাচার্য বরাবর আগামী ১২ মার্চের মধ্যে বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সভায় তিনি আমাদেরকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকার অনুরোধ করেছেন। আমরা সেখানে বলেছি, আমরা থাকবো না। সে সভার পর গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে আজ আমরা শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে চূড়ান্ত হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, মাননীয় মন্ত্রী আমাদেরকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকার অনুরোধ করেছেন। এখন থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত আমাদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের। এখানে তার নির্দেশনা বা অনুরোধে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। আমরা মন্ত্রীর আহ্বানকে শ্রদ্ধা করি।
এদিকে, গুচ্ছের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই সভা হবে বলে জানানো হয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির সভায় এ পরিকল্পনা হয়েছে। গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে মার্চের শেষ দিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চায় আয়োজক কমিটি।